Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের অপেক্ষা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। গতকাল সংস্থাটির দশম কমিশন সভায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ভোটের তফসিল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা। তারা কমিশনের প্রস্তুতি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। বুধবার তফসিল সংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সিইসিসহ নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকের পরই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে। 

গতকাল কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন ঘোষণা হবে ত্রয়োদশ ভোটের তফসিল। এ ছাড়া, প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হয়েছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। 

ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ১১ই ডিসেম্বর। গতকালের সভায় এমনটাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন ১২ই ফেব্রুয়ারি ঠিক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মূলত একইদিনে গণভোটের জন্যই ইসি ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া, গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ সভায়। 

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল পূর্ব আনুষ্ঠানিক কাজের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সিইসি’র বক্তব্য রেকর্ড করতে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে সোমবার পত্র পাঠানো হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় সময় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবার ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা ও মাঠপর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে বুথ সংকট কাটাতে প্রতিটি কক্ষে একাধিক সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে। কোথাও জায়গা না থাকলে অস্থায়ী বুথ করা হবে বলেও জানান তিনি। ইসি সানাউল্লাহ বলেন, গণভোটের প্রশ্ন ভোটারদের সহজে বুঝতে সুবিধা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে বড় আকারে প্রশ্নের নমুনা ঝুলিয়ে রাখা হবে। 

গতকালের সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মীদের তালিকায় নেয়া হবে। তবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত রিজার্ভে রাখা হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদের নিয়োগ না দেয়ার কথা জানানো হয়। 

এদিকে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী আগের রাতেই ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সানাউল্লাহ। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আগের রাতেই কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থাটা চালু হয়। রাতের ভোট বিতর্ক হওয়ায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ভোটের দিন সকালে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করে। আপনারা আগের পদ্ধতিতে ফিরছেন কেন? এমন প্রশ্নে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আমরা কনফিডেন্ট, আমরা আর ওইসব ঘটনার অবতারণা দেখবো না। আমাদের যথাযথ সুপারভিশন থাকবে এবং আমরা নজর রাখবো যাতে করে কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটে।

পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত: এবারের জাতীয় নির্বাচনের নতুন সংযোজন পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণ। প্রবাসে থাকা ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে। গতকালের কমিশন সভায় জানানো হয়, বিদেশে পাঠানোর পোস্টাল ব্যালটের মুদ্রণ সোমবার থেকে শুরু হয়ে পরশুর মধ্যে বিদেশে পাঠানো শুরু হবে। দেশের ভেতরের পোস্টাল ব্যালটের আবেদন তফসিল ঘোষণার দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন চলবে।

আরও যেসব সিদ্ধান্ত: ইসি সানাউল্লহ জানান, তফসিল ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে জুম মিটিং করা হবে। অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহ ও সমস্যা সমাধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৪ জন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিব নেতৃত্বে থাকবেন। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে, প্রয়োজন হলে তারা বিচারও করতে পারবেন। তফসিলের পরদিন থেকেই প্রতিটি উপজেলা/থানায় দু’জন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। শেষ পাঁচদিনে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পরই প্রচার সামগ্রী অপসারণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া হবে-এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে একটি পরিপত্র এই সপ্তাহের মধ্যে দেয়া হবে। তার আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। নির্বাচন কমিশনে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল স্থাপিত হবে। যেখানে সব বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠানের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং এই সেলের আমাদের একটা ক্যাপাসিটি থাকবে মিস-ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন হ্যান্ডেল করা। 

রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, এটা নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন সাধারণত জেলা প্রশাসকরা হয়ে থাকেন, এর বাইরেও আমাদের কিছু প্রস্তাবনা আছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। যথাসময় জানতে পারবেন।

প্রধান উপদেষ্টাকে প্রস্তুতি অবহিত করেছে ইসি: এদিকে কমিশন সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও ৪ নির্বাচন কমিশনার। তাদের সঙ্গে ইসি’র জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদও ছিলেন। মূলত আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি ও কমিশনাররা। বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একইদিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার। তিনি বলেন, জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।

নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করলেন সিইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। গতকাল সন্ধ্যায় সিইসি’র নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কমিশনারগণ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন আয়োজনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

বৈঠকে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি সঠিক ও সুন্দরভাবে এগোচ্ছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও একইদিনে গণভোট আয়োজনের জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রস্তুতিকালে ইসিকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা। এতে বলা হয়, নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে সর্বাত্মক সহযোগিতা করায় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি করেছে।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘জাতির জন্য প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে আপনারা (ইসি) চালকের আসনে আছেন। আমাদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।’ ড. ইউনূস  বলেন, জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতিকে আমরা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন উপহার প্রত?্যয়ে এগিয়ে চলছি। প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।