রাজধানীর বাজারে তেল ও পিয়াজের দামে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারের অনুমতি ছাড়াই ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারে বেশ হইচই শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দুই-তিনদিনের ব্যবধানে পিয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দামে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্নআয়ের ভোক্তা সাধারণ।
এদিকে বাজারে কিছুটা কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। সরবরাহ বাড়তে থাকায় শীতের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে বলেও জানান বিক্রেতারা। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি হচ্ছে না বলে নতুন মৌসুম শুরুর শেষ মুহূর্তে পিয়াজের দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পিয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণেই পুরনো পিয়াজের দাম বেড়েছে। তবে বাজারে মুড়িকাটা নতুন পিয়াজ আসতে শুরু করেছে। যদিও সেটা পরিমাণে খুব অল্প। আর পাতাসহ পিয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
আরেক পিয়াজ ব্যবসায়ী জানান, আমদানি করা হবে না- এমন খবরে দর বেড়েছে। মজুতদার পর্যায়ে দর বাড়ার কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
জানা গেছে, মাসখানেক আগে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে পিয়াজের বাজার। চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার মতো বেড়ে যায় দাম। প্রতি কেজির দর ওঠে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এরপর সরকার আমদানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে দর কিছুটা কমতে থাকে। ধীর ধীরে কমে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমে আসে।
গত সপ্তাহে সরকারের তরফে বলা হয়, পিয়াজের পর্যাপ্ত মজুত আছে। নতুন পিয়াজও শিগগিরই বাজারে চলে আসবে। তাই কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। সরকারের এমন পদক্ষেপের সুযোগ নিচ্ছেন মজুতদার ব্যবসায়ীরা। ফলে ফের দাম বাড়ছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে টিসিবি’র হিসাবে, গত বছরের চেয়ে এখনো ১০ শতাংশ কম দর রয়েছে পিয়াজের। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী আব্বাস আলী বলেন, সরকার পিয়াজ আমদানি করবে না। এ জন্য মজুতদাররা আবার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির অনুমতি না দেয়ায় সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। তবে এটা সাময়িক। দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বাজারে আসা মালিবাগের বাসিন্দা সেফালী বেগম বলেন, সংসারের খরচ কীভাবে কমাবো সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। এতদিন সবজির দাম বেশি ছিল। এখন একটু ধীরে ধীরে কমছে। তবে পিয়াজ আর তেলের দাম আবার বেড়েছে। মানে একটা কমলে আরেকটা বাড়ে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষদের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এদিকে সরকারের অনুমতি ছাড়াই প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে ৫ লিটারের বোতলের দাম ৪৩ টাকা এবং দুই লিটারের বোতলের দাম বাড়িয়েছেন ১৮ টাকা। দু’দিন ধরেই সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে বাজারে। তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন গত বুধবার সাংবাদিকদের জানান, সরকারের অনুমতি ছাড়াই ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়াতে পারেন না। এটা আইনের ব্যত্যয়। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রাহমানের সভাপতিত্বে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, দাম এতটা বাড়ানো যাবে না। ৯ টাকা থেকে কমিয়ে দাম নির্ধারণ করতে হবে। বাড়তি দাম কতোটা কমবে সেটি নিয়ে সরকার-ব্যবসায়ী উভয়পক্ষের মধ্যে দরকষাকষি চলছে, যা আগামী রোববারের বৈঠকে চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবসায়ীদের বাড়তি দাম কিছুটা কমাতে বলেছে সরকার। ব্যবসায়ীরাও কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আগামী রোববার সেটি চূড়ান্ত হতে পারে।
ওদিকে বাজারে কিছুটা কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। সরবরাহ বাড়তে থাকায় শীতের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে বলেও জানান বিক্রেতারা।
বাজারে গত সপ্তাহে লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকায় এবং গোল বেগুন বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা পর্যন্ত দামে। এই দাম এখন কমে লম্বা বেগুন ৭০-৮০ টাকা এবং গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে এখন মোটামুটি দুই রকমের শিম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে সবুজ শিমের দাম ৮০ টাকা থেকে কমে ৫৫-৬০ টাকায় নেমেছে। দাম কমেছে রঙিন শিমেরও। এই শিমের দাম ১০০-১২০ টাকা থেকে কমে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের প্রতিটি ফুলকপি এখন ৫০-৬০ টাকা থেকে কমে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে বাঁধাকপির দামও। প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৪০-৫০ টাকা। একইভাবে দাম কমে আসছে টমেটোর। প্রতি কেজি টমেটোর দাম ১২০-১৪০ টাকা থেকে কমে মান ও বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে।
সবজি বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এই সরবরাহের কারণে দাম কমতে শুরু করেছে। এতে করে বিক্রিও বেড়েছে।
এদিকে, বাজারে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল ডিম-মুরগির দাম। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম একেবারেই কম। গত তিন-চারদিন ধরেই প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১১৫-১২০ টাকা দরে। যদিও ডিমের দাম আবারো খানিকটা বেড়েছে। পাইকারিতে বেড়ে যাওয়ার কারণে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন আবারো ১৩০ টাকায় উঠবে বলে ধারণা করছেন ভোক্তারা। ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকার মধ্যে। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মাছ-মাংসসহ অন্য নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। আকৃতিভেদে রুই বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতলা ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২৮০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০-২৫০ টাকা এবং শিং-মাগুর ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চাষ ও দেশি কই ৩০০-৬০০ টাকা আর বোয়াল ও চিতলসহ বড় মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এ ছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে ছোট চিংড়ি ৩০০-৩৫০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা, মলা মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, পাবদা মাছ আকারভেদে ৩০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।