Image description
জেল পালানো বন্দি গ্রেপ্তারে জোর নেই

জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে হামলা ও বন্দি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহে ১৬ জন নিহত হয়। পাঁচটি কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ২ হাজারেরও বেশি বন্দি। কিন্তু এসব ঘটনার ১৫ মাস পার হলেও পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে ৭০০ বন্দি এখনো অধরাই রয়ে গেছে। যাদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি, বিডিআর বিদ্রোহ, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামি এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বন্দি গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা ব্যস্ততার কারণে জোর দিতে পারেনি। বর্তমানেও নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ ব্যস্ত সময় পার করছে। অথচ এসব দাগি আসামিরা আইনের আওতায় না আসলে নির্বাচনি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকির আশঙ্কা রয়েছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারে সারা দেশে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বন্দি পালানো কারাগারগুলোর মধ্যে নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে সর্বোচ্চ ৮৪৬ জন পালিয়েছিল। গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দি পালিয়ে যান। তাদের অধিকাংশ জঙ্গিবাদের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে ছিলেন। কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ১০৫ জন, শেরপুর জেলা কারাগার থেকে ৫১৮, সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে ৫৯৬ জন পালায়। এর মধ্যে নরসিংদী থেকে পালানোদের মধ্যে ১৬০ জন, সাতক্ষীরা কারাগারের ৪০ জন, কুষ্টিয়ার ১৬ জন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের ১৩০ জন ও শেরপুর কারাগারের ৩৫৪ জন বন্দি এখনো অধরা রয়েছে। এ ছাড়াও এসব কারাগার থেকে লুট হওয়া ২৭টি অস্ত্র এবং ৭ হাজার ৪০০ রাউন্ড গুলি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের মধ্যে চাইনিজ রাইফেল, বিডিএইড এবং শটগান রয়েছে।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, পট পরিবর্তনের পর কারাগার থেকে আসামি পালানো এবং অনেক পেশাদার আসামির ঢালাও জামিন হওয়ায় তখন থেকেই জননিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হয়। ইতোমধ্যে ওইসব অপরাধীর অনেকেই রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে চলে গেছে। জামিন প্রাপ্তদের জামিন বাতিল করে এবং পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না গেলে নির্বাচনি নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও মিডিয়া) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, জেল পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। এক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। এমনও ঘটেছে অন্য ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসার পর পুরোনো বন্দিরা তাকে চিনতে পেরেছে। তখন নিশ্চিত হওয়া গেছে কারাগার থেকে তিনি পালিয়ে ছিলেন। মো. জান্নাত-উল ফরহাদ আরও বলেন, কারাগারে সহিংসতা চালানোর সময় অনেক নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য পলাতক বন্দিদের অনেকের তথ্য আমাদের কাছে নেই। থানা ও আদালতে থাকা তথ্যেও অনেকে শনাক্ত হচ্ছেন। যখন কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন- তাকে আগের মামলার সঙ্গে পালানোর মামলার আসামি হিসেবেই গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে ঢুকানো হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, জেল পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারে সারা দেশে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।