Image description

গত ২৫ বছরে সাত ধাপ পেরিয়ে ঢাকা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল নগর। সামনে শুধু এখন জাকার্তা। আর ২৫ বছর পর এই শহরও ঢাকার পেছনে পড়বে। তেমন আভাসই দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ‘ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টস ২০২৫’ প্রতিবেদনে।

যদি তাই ঘটে, তাহলে বাংলাদেশের রাজধানীর জন্য তা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, যদি সংকট এড়াতে হয়, তবে এখন থেকেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আগামীতেও। ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টসে আরও বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে ঢাকা তালিকায় শীর্ষে উঠবে। অর্থাৎ জাকার্তাকে পেছনে ফেলে তখন ঢাকা হবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরী। জনসংখ্যা হবে প্রায় ৫ কোটি ২১ লাখ।

শীর্ষে জাকার্তা, এরপরই ঢাকা

ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টস ২০২৫–এ বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। এরপরই ঢাকার অবস্থান। জাপানের টোকিওকে পেছনে ফেলেছে জাকার্তা ও ঢাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা টোকিওর পর তালিকায় আছে যথাক্রমে ভারতের নয়াদিল্লি ও চীনের সাংহাই।

ইউনাইটেড নেশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স এ প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে। প্রকাশ করা হয়েছে গত ১৮ নভেম্বর। তালিকায় বলা হয়েছে, সবচেয়ে জনবহুল নগর জাকার্তায় (২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত) মোট ৪ কোটি ১৯ লাখ মানুষ বসবাস করছিল। ২০০০ সালে নগরটিতে মানুষ ছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ।

তবে প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০৫০ সালে সবচেয়ে জনবহুল নগরের বৈশ্বিক তালিকায় জাকার্তা আবারও দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাবে। ওই সময় নগরটির জনসংখ্যা হবে ৫ কোটি ১৮ লাখ। তাকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থানে উঠে আসবে ঢাকা।

অন্যদিকে ২০০০ সালে টোকিওর জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩ লাখ। তখন বিশ্বের জনবহুল নগরগুলোর তালিকায় জাপানের রাজধানী ছিল ১ নম্বরে। ২৫ বছর পরে এসে নগরটির জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখে। বৈশ্বিক তালিকায় টোকিও তাই এখন ৩ নম্বরে।

২০৫০ সাল নাগাদ এ তালিকায় টোকিওর অবস্থান হবে ৭ নম্বরে। টোকিওর মোট জনসংখ্যা এখনকার তুলনায় কমে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৭ লাখে।

 

ঢাকার জনসংখ্যা কত

ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টস ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এখন প্রায় ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ বসবাস করছে।

২০০০ সালে ঢাকা ছিল বিশ্বের নবম জনবহুল নগর। জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ। ২৫ বছরের ব্যবধানে ঢাকা তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। এ সময়ে ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির এমন ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আগামীতেও। ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টসে আরও বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে ঢাকা তালিকায় শীর্ষে উঠবে। তখন ঢাকা হবে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল নগরী। জনসংখ্যা হবে প্রায় ৫ কোটি ২১ লাখ।

ঢাকার অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে বাধা তৈরি করছে। এটার সমাধানে টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
উসওয়াতুন মাহেরা, শিক্ষক ও নগর পরিকল্পনাবিদ

শীর্ষে আরও যেসব নগর

ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রস্পেক্টস ২০২৫ অনুযায়ী, শীর্ষ ১০ নগরের তালিকায় জাকার্তা, ঢাকা ও টোকিওর পরের অবস্থানে থাকা নয়াদিল্লির জনসংখ্যা এখন ৩ কোটি ২ লাখ। পঞ্চম স্থানে থাকা চীনের শহর সাংহাইয়ের জনসংখ্যা ২ কোটি ৯৬ লাখ।

২০৫০ সাল নাগাদ নয়াদিল্লিকে হটিয়ে সাংহাই তৃতীয় বৃহত্তম জনবহুল নম্বরে পরিণত হবে বলে প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে।

এ বছরের তালিকায় ৬ নম্বরে আছে চীনের আরেকটি নগর গুয়াংজু। নগরটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৭৬ লাখ। ২০৫০ সালে গুয়াংজু ২ কোটি ৯২ লাখ মানুষ নিয়ে তালিকায় ৮ নম্বরে নেমে আসতে পারে।

২০২৫ সালের তালিকায় ৭ ও ৮ নম্বরে আছে মিসরের কায়রো ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা। কায়রোর জনসংখ্যা এখন ২ কোটি ৫৬ লাখ। ম্যানিলার ২ কোটি ৪৭ লাখ। প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, ২০৫০ সালে কায়রো ৬ নম্বরে এবং ম্যানিলা ৯ নম্বরে থাকবে।

এবারের তালিকায় ৯ ও ১০ থাকা ভারতের কলকাতা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের জনসংখ্যা ২ কোটি ২৫ লাখ করে। ২০৫০ সালের তালিকায় কলকাতা ১০ নম্বরে নেমে যাবে। কলকাতার জনসংখ্যা হবে ২ কোটি ৩৮ লাখ। অন্যদিকে ২ কোটি ১২ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে সিউল তালিকায় ১২ নম্বরে অবস্থান করবে।

এ প্রতিবেদনে বিশ্বের নগরগুলোয় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা উঠে এসেছে। একে ‘মনুষ্য বসতির নতুন প্রবণতা’ বলে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।

বাড়তি জনসংখ্যা ঢাকা নগরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে চাপের মধ্যে ফেলেছে
বাড়তি জনসংখ্যা ঢাকা নগরের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে চাপের মধ্যে ফেলেছেফাইল ছবি: প্রথম আলো

নাগরিক সেবায় চ্যালেঞ্জ বাড়ছে

ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে তরতরিয়ে। এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করা না গেলে সংকট অনিবার্য, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ জন্য দরকার টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উসওয়াতুন মাহেরা।

উসওয়াতুন মাহেরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ ঢাকায় আসেন। তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি জনসংখ্যার কারণে ঢাকার বায়ু ও পানি দূষিত হচ্ছে। পরিবহন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো সেবা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ঢাকার অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে বাধা তৈরি করছে।

‘এর সমাধানে টেকসই ও সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে,’ বলেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।

প্রয়োজন নতুন নগরনীতি

বাংলাদেশে গ্রাম কিংবা মফস্‌সল থেকে দিন দিন ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তার কয়েকটি কারণ জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম।

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকায় অভিবাসনের হার আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দ্বিগুণেরও বেশি। গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। অনেকেই কাজের খোঁজে ঢাকায় আসেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশগত ঝুঁকির কারণেও মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন। এ ছাড়া গ্রামে কৃষিজমি ক্রমেই কমতে থাকায় অনেক ভূমিহীন ঢাকায় পাড়ি জমান। শিক্ষাস্বাস্থ্যসহ নানা নাগরিক সুবিধার জন্যও অনেকে ঢাকায় আসেন।’

ঢাকা এরই মধ্যে জনবহুল, ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম।

এ জন্য নতুন নগরনীতি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সেযব প্রতিষ্ঠান নাগরিক সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ঢাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।