Image description

সরকারি পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) চিফ ইনস্ট্রাক্টর (৬ষ্ঠ গ্রেড) নিয়োগের অভিজ্ঞতা যাচাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। একই ধরনের অভিজ্ঞতা থাকলেও আবেদনকারীদের একটি পক্ষকে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হলেও অপরপক্ষকে এই সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় বঞ্চিত প্রার্থীরা তাদের মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেছেন। এর আগে রিট করায় আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের এক বিজ্ঞপ্তিতে ৯টি ক্যাটাগরিতে ৩৬ জন আবেদনকারীকে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়।

যদিও পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বলছে, বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশের পর যারা আবেদন জমা দিয়েছিলেন তাদের বিষয়ে পিএসসি সংশ্লিষ্টট অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। সেই আলোচনায় অধিদপ্তর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতার সনদ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সুপারিশের আলোকে পরবর্তীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বাদ দেওয়া হয়। নতুন করে যারা মৌখিক পরীক্ষার সুযেগা পেয়েছেন তাদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা ছিল। আদালতের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির ইউনিট-৯ এর পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘নতুন করে যারা মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা ছিল। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা আইন উপদেষ্টার মতামত নিয়েছি। আইন উপদেষ্টা রিটকারী প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মতামত দেওয়া তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।’

‘পিএসসি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ষষ্ঠ গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদে প্রকল্পের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে আমাদের বাতিল করা হয়। এখন সেই একই অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্যদের গ্রহণ করা হলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হলো। পিএসসির মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তে এ ধরনের বৈষম্য জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে বারবার আদালতে যেতে হওয়া এবং পুনরায় সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলেও মন্তব্য করছেন তারা—ভুক্তভোগী প্রার্থী

জানা গেছে, ২০২১ সালে পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিফ ইন্সট্রাক্টর পদে মোট ২২৬ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে পলিটেকনিকের জন্য ২৫টি এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ২০১টি পদ বরাদ্দ ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিএসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন ডিগ্রির পাশাপাশি নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

পলিটেকনিক ক্যাটাগরিতে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিতে তিন বছরের শিক্ষকতা ও পাঁচ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা, আর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাটাগরিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতাসহ মোট পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছিল। তবে সরকারি নাকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে সে বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল না।

 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন গ্রহণের পর ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে যোগ্য–অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে পিএসসি। ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক আবেদনকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অভিজ্ঞতার ঘাটতি, ডিগ্রি অর্জনের পর অভিজ্ঞতা কম থাকা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য না ধরা, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা না থাকা, প্রকল্পভিত্তিক চাকরির অভিজ্ঞতা এবং রাজস্ব খাতে অস্থায়ী ভিত্তিক চাকরির অভিজ্ঞতা থাকায় দুই হাজার ৩০০ এর বেশি প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়। 

মৌখিক পরীক্ষার পরদিন ২০২৩ সালের ৯ মে তিন ক্যাটাগরিতে মাত্র চারজন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করে পিএসসি। বাদ পড়া অনেক আবেদনকারী এ পরিস্থিতিকে ‘অন্যায্য’ দাবি করে ২০২৩ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানিতে আরও জানা যায়, পূর্বেও কয়েকজন প্রার্থী প্রকল্পভিত্তিক অভিজ্ঞতা থাকার পরও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সুপারিশ পেয়েছিলেন।

আদালতের নির্দেশনার পর পিএসসি ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে ৯টি ক্যাটাগরিতে ৩৬ জন আবেদনকারীকে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। মৌখিক পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়া প্রার্থীদের রোল নম্বর যাচাই করে দেখা যায়, যাদের পুনরায় সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই একই ধরনের অভিজ্ঞতার কারণে পূর্বে তাদের আবেদন বাতিল হয়েছিল।

পিএসসির এমন সিদ্ধান্তের পর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্বের অযোগ্যদের আবার মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হলেও একই ধরনের অভিজ্ঞতা থাকা অন্যান্য আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচনা করা হয়নি। তারা বলছেন, একই নীতির আওতায় একদল প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করে অন্যদের আবার যোগ্যতা প্রদান করা বৈষম্যমূলক।

 

ভুক্তভোগী এক আবেদনকারী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে প্রকল্পের অভিজ্ঞতা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বা অস্থায়ী চাকরির অভিজ্ঞতা দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছিল। এখন ওই একই অভিজ্ঞতা থাকা কিছু প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা কীভাবে ন্যায়সংগত হয়? একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এমন দ্বিচারিতা মেনে নেওয়া যায় না।’

আরেকজন বলেন, ‘বিপিএসসি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ষষ্ঠ গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদে প্রকল্পের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য নয়—এই যুক্তিতেই আমাদের বাতিল করা হয়েছিল। এখন সেই একই অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্যদের গ্রহণ করা হলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হলো। পিএসসির মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তে এ ধরনের বৈষম্য জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করছে।’ নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে বারবার আদালতে যেতে হওয়া এবং পুনরায় সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলেও মন্তব্য করছেন তারা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘চিফ ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের অভিজ্ঞতার সনদ নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে।’