Image description

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন বিসিএস প্রত্যাশীরা। এ দাবিতে গত শনিবার রেললাইন অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরীক্ষা যৌক্তিক সময়ে নেওয়ার পক্ষে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, এনসিপি বিবৃতিও দিয়েছে। তবুও নির্ধারিত সময়েই এই বিসিএসের পরীক্ষা নেবে সরকারি কর্ম কমিশন।

কেন নির্ধারিত সময়েই ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করতে চায় পিএসসি—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাংবিধানিক সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তিনি বলেছেন, ‘বিসিএসের জট কমানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। এটি নিয়ে তারা কাজ করছেন। ৪৭তম বিসিএসের রোডম্যাপ অনেক আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। হঠাৎ করে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়।’

পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা চাকরিপ্রার্থীদের জীবন থেকে তিন-চার বছর হারিয়ে যেতে দিতে চাই না। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে চাই। এজন্য নির্ধারিত সময়ে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে।’

এর আগে গতকাল রবিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি জানায়, ৪৭তম বিসিএসের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কতিপয় প্রার্থী আন্দোলন করছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিকট আবেদন-নিবেদন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি একটি সংগঠিত কার্যক্রমের আওতাধীনে কেউ কেউ অনশন ধর্মঘটও করছেন। 

আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি পিএসসির সাথেও একাধিকবার দেখা করেছেন, সমাবেশ করেছেন এবং কখনও কখনও কমিশন অফিস ঘেরাও করেছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যে, কমিশন ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে এবং প্রার্থীরা বিগত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রার্থিতার আবেদন পেশ করেছে। 

আবেদনকারীরা গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ভিত্তিতে কমিশন ১০,৬৪৪ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষা শুরুর তারিখ হিসেবে ২৭ নভেম্বর, গত ৩ জুনেই কমিশন কর্তৃক নোটিশ মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্রায় ছয় মাস আগেই ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষা শুরুর তারিখ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। সুতরাং, লিখিত পরীক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস সময় প্রদান করা হয়েছে এরূপ প্রচারিত তথ্য মোটেই সঠিক নয়।

লিখিত পরীক্ষার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী যথাসময়ে যেন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রার্থীর এমন দাবি সম্পর্কেও কমিশন অবহিত আছে। কমিশন মনে করে যে, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি একজন প্রার্থীর গোটা শিক্ষা জীবনের পাঠাভ্যাসের সাথে অন্তর্গতভাবে সম্পৃক্ত এবং এ পরীক্ষার প্রস্তুতিকাল কোনোভাবেই পরীক্ষার আগের ২-৪ মাস নয়। 

বিসিএস পরীক্ষার আবেদন পেশ করার পর প্রার্থীরা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক পরীক্ষা প্রদানে প্রস্তুত থাকবে কমিশন এমনটিই আশা করে। পরীক্ষা প্রদানে গড়িমসি বা অনীহা কোনোভাবেই একজন যথার্থ সরকারি চাকরি-প্রার্থীর নিকট থেকে প্রত্যাশিত শৃংখলাবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান কমিশন দায়িত্বগ্রহণের পর ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় ক্ষেত্রেই বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ও ফলাফল এবং উক্ত পরীক্ষাগুলোর জট ও জটিলতা নিষ্পত্তির ভার কমিশনের উপর ন্যস্ত হয়েছিল। এরূপ জট ও জটিলতা থেকে বের হয়ে আসা কমিশনের একটি বড় অগ্রাধিকার ছিল। দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ করা বর্তমান কমিশনের অন্যতম প্রাধিকার। 

এ লক্ষ্যে কমিশন বিগত মে-জুন মাসে বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষার একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। রোডম্যাপের আওতায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ও ফলাফল প্রকাশিত হয়ে আসছে। বিগত ছয়মাস সময়ে ২টি বিশেষ বিসিএস (৪৮ ও ৪৯) অনুষ্ঠিত হয়েছে, অসংখ্য নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

এসব রোডম্যাপ অনুসরণ ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য কমিশনের সদস্য ও কর্মচারীরা অতিরিক্ত খাটুনিও খাটছে। কোনো পরীক্ষা পিছানো হলে কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসরণ করা অসম্ভব হবে এবং কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো মুশকিল হবে। 

বোধগম্য কারণেই কমিশন পরীক্ষা পেছানোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং কমিশন বিশ্বাস করে যে, কমিশনের এরূপ অবস্থান যথার্থ ও সময়োপযোগী। এ অবস্থায়, ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রার্থীদের প্রতি কমিশনের অনুরোধ হচ্ছে, তারা যেন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি মোতাবেক ২৭ নভেম্বর থেকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।