ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. সুমি খাতুনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে নিজ বাড়িতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি বিরল ‘ফাইব্রাস ডিসপ্লাসিয়া’ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্য, পুলিশ ও সহপাঠীরা।
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী সুমির মরদেহ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার এসআই রাকিবুজ্জামান রাকিব। তিনি পরিবারের বরাতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘ফাইব্রাস ডিসপ্লেশিয়া’ নামে বিরল রোগে আক্রান্ত ছিলেন সুমি। তার চিকিৎসাও চলছিল। তবে চিকিৎসকরা শেষ সময়ে জানিয়েছিলেন, রোগটি আর নিরাময় সম্ভব নয়।
অসুস্থতা সত্ত্বেও সুমি সব সময় চেষ্টা করতেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বিভিন্ন চিকিৎসক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্থায়ী সমাধান মিলছিল না। পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপ এবং ক্রমাগত যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
এসআই রাকিব বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, রোগটির কারণে যন্ত্রণা হয়। সে কারণেই হয়তো আত্মহত্যা করতে পারেন তিনি। পরিবারের কোনও অভিযোগ ছিল না। সে কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সহপাঠীরা প্রাথমিকভাবে জানান, সুমি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে বিরল রোগ ‘ফাইব্রাস ডিসপ্লেশিয়া’সহ গুরুতর শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তার হাঁড় ক্ষয় হয়ে গিয়েছিল। একাধিকবার অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ব্যথা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
অসুস্থতা সত্ত্বেও সুমি সব সময় চেষ্টা করতেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। বিভিন্ন চিকিৎসক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও স্থায়ী সমাধান মিলছিল না। পরিবারের জন্য কিছু করতে না পারার আক্ষেপ এবং ক্রমাগত যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। একা একাই লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামলাতে পারেননি বলে তাদের ধারণা।
সুমির ছোট খালা মোসা. কাঞ্চনী জানান, আজ সোমবার ভোরে (ফজরের নামাজের আগে) সুমির বাবা ও মা তার রুমের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে পরে রশি কেটে নামান। সকালে পুলিশ এসে তার রোগের রিপোর্টগুলো দেখে এবং বাবাকে সাথে করে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাকে কাফন করতে বলা হয়। বাদ যোহর তার জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সুমি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তার লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ’
সুমি বেশ মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অসীম সরকার। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মেয়েটি খুব ভালো ও মেধাবী ছিল। অসুস্থতার কারণে এক বছর পড়াশোনায় বিরতিও দিতে হয়। তার এভাবে চলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা বিভাগের সবাই শোকাহত।’ আর কোনও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যেন এমন না হয়, সেই কামনা করেন তিনি।