জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে খুব শিগগিরই প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আজ এক বছরের পূর্তি পালন করছে। এ উপলক্ষে কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো পুনঃপরীক্ষা করা হচ্ছে যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। খুব শিগগিরই তফশিলের তথ্য জানানো হবে।” সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তফশিল ঘোষণা ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর আলোচনায় রয়েছে। ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৭, ৮ বা ১২ ফেব্রুয়ারি; প্রচলিত হিসাবে রবিবার ভোটগ্রহণ বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসি তফশিল ঘোষণার আগে সব প্রস্তুতি শেষ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। মঙ্গলবার ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক, ৩০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ২২ জন সচিব এবং বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, ভোটকর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।
মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ইসি ‘মক ভোটিং’ আয়োজন করবে। এতে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে একজন ভোটার কোন সমস্যার সম্মুখীন হন, কত সময় লাগে, এবং বয়স্ক, গর্ভবতী ও প্রতিবন্ধী ভোটারের জন্য কী ব্যবস্থা দরকার—এসব পরীক্ষা করা হবে। এর ভিত্তিতে ভোটকক্ষ ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
প্রতিটি ভোটকক্ষে কমবেশি ৫০০ নারী ও ৬০০ পুরুষ ভোটারের জন্য কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের সাথে গণভোট একসঙ্গে থাকায় ভোটকক্ষ সংখ্যা ও ভোটকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে, যার ফলে খরচও বেড়ে যাবে। প্রতিটি কেন্দ্রের খরচ আনুমানিক ১৪ হাজার টাকা বাড়বে। মক ভোটিং শেষে এই চূড়ান্ত করা হবে।
গণভোটের অধ্যাদেশ জারির পর ইসি আনুষ্ঠানিকভাবে গণভোটের প্রস্তুতি শুরু করবে। সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য পৃথক রঙের ব্যালট ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট আগের মতো সাদা-কালো থাকবে, আর গণভোটের ব্যালটের জন্য সবুজ বা গোলাপি রঙ চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া দুটি ব্যালটে এক সিল ব্যবহার করা হবে নাকি আলাদা সিল—এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার সঙ্গে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ ও গণভোটের আয়োজনকে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি জানিয়েছেন, ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা আত্মবিশ্বাসী।
নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন, ভোটকর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ—এসবের অধিকাংশ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন। সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান।
ঢাকাটাইমস