‘দুই দিন ধইরা ওর জ্বর, সকাল থেকে চারবার বমি করছে। সর্দি-কাশিও আছে, কিছু খেয়ে পেটে রাখতে পারছে না আমার ছেলে। তাই সকাল সকাল হাসপাতালে নিয়া আসছি।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবে ছেলের অসুখের কথা বর্ণনা করছিলেন পারুল আক্তার।
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (বহির্বিভাগ) ডা. সুমাইয়া লিজা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ২০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।
রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার থেকে আসা শান্তা ইসলাম জানান, তাঁর শিশু সন্তানের ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুঁড়ি বা গুটি দেখা দিয়েছে। পরিবারে একজন থেকে এ রোগ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের সূত্রে জানা যায়, প্রতি চারটি শিশুর একটি শিশু চর্ম রোগ নিয়ে আসছে। যাদের জ্বর ও সর্দি-কাশিও রয়েছে। এসব শিশু আক্রান্ত হয়েছে বড়দের কাছ থেকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন ‘এই শীত, এই গরম’ আবহাওয়া। এই সময় নানা রোগ দেখা দেয়। এর মধ্যে ব্রংকিওলাইটিস, স্ক্যাবিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর, অ্যাজমা ও সিওপিডি রোগ বেশি হয়।
ডা. সুমাইয়া লিজা বলেন, শীতের এই সময় শিশুদের নিউমোনিয়ার চেয়ে ব্রংকিওলাইটিসই বেশি হয়। ফুসফুসের ক্ষুদ্র নালি ব্রংকিউলে ভাইরাসের কারণে প্রদাহ হলে তাকে বলে ব্রংকিওলাইটিস এবং আরো গভীরে এলভিওলাইয়ে প্রদাহ হলে বলে নিউমোনিয়া।
তিনি বলেন, ব্রংকিওলাইটিস দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের বেশি হয়। এ রোগে নাক দিয়ে পানি পড়ার পাশাপাশি কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আক্রান্ত শিশুর জ্বরের মাত্রা কম থাকে। নিউমোনিয়ায় শিশুর খুব জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।
চিকিৎসকরা জানান, শীতকালে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস ইত্যাদি ভাইরাস জ্বর শিশুদের রোগের জন্য দায়ী। শীতে অ্যাজমা বেড়ে যায়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে, বাড়ে ধুলার পরিমাণ। এতে শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আরেক চিকিৎসক ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বা নিউমোনিয়ার রোগীদের ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে। অন্যান্য রোগী সাধারণ ওষুধ খেয়ে সুস্থ হচ্ছে না। এতে এসব রোগী তিন-চার দিন দেরি করে হাসপাতালে আসছে।
ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন বলেন, প্রতিবার শীত আসার আগে থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। আবহাওয়া যখন মোটামুটি শুষ্ক হতে শুরু করে, তখন ডায়রিয়ার আউটব্রেক বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ রোটা ভাইরাস। এ ছাড়া আরো অনেক ভাইরাস আছে। যেগুলোর লক্ষণ রোটা ভাইরাসের মতো।
ডা. সুমাইয়া লিজা বলেন, এই সময় শিশুকে গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে, তবে ঘামতে দেওয়া যাবে না। নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, স্ক্যাবিস যাই হোক না কেন, কোনো অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।