দেশে একের পর এক ভূমিকম্পে ভয় ও উদ্বেগে সবচেয়ে বেশি মানসিক আঘাত পেয়েছে কোমলমতি শিশুরা। বয়স কম হলেও তাদের অনুভূতির তীব্রতা প্রবল। হঠাৎ কাঁপুনির অভিজ্ঞতা, পরিবারে আতঙ্ক, পারিপার্শ্বিক অসহায়ত্বের দৃশ্য, ঘন ঘন সতর্কবার্তার কারণে শিশুদের মনে তৈরি হয়েছে গভীর নিরাপত্তাহীনতা। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতে, ঘন ঘন ভূমিকম্প পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক স্থিতি নষ্ট করছে। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পজনিত ট্রমার লক্ষণ শিশুদের ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। অনেক শিশুর মধ্যে দেখা যাচ্ছে-হঠাৎ চিৎকার করে ওঠা, রাতে ঘুম ভেঙে কান্না, স্কুলে যেতে অনীহা ইত্যাদি। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, তাদের সন্তানরা সামান্য কম্পন বা দরজা-জানালা নড়ামাত্রই আতঙ্কে লাফিয়ে উঠে দৌড়ে বাইরে যেতে চায়। কেউ কেউ আবার বারবার জিজ্ঞাসা করছে-আবার কি ভূমিকম্প হবে?
রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরা বলে, শুক্রবার ভূমিকম্পের পর কোনো কিছুতে মন বসছে না। স্কুলে যেতে ভয় করছে। বাসায় থাকতেও ভয় করছে। পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করছে না। এই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারজানা বীথি যুগান্তরকে বলেন, মেয়ে বাসায় থাকতে ভয় পাচ্ছে। ভূমিকম্প নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন করছে। বারবার খোলা মাঠে যেতে চাইছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্ষেত্রে শিশুদের ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য অভিভাবকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের আশ্বস্ত করতে হবে সে নিরাপদ। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তার ভয়ের অনুভূতিকে মূল্যায়ন করতে হবে। দৈনন্দিন রুটিন যেমন-পড়াশোনা, খেলা, ঘুম এসব নিয়মিত করার চেষ্টা করতে হবে। খুব বেশি ভয়ে থাকলে শিশু মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
অভিভাবকরা বলছেন, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ভূমিকম্পের দীর্ঘমেয়াদি খারাপ প্রভাব যাতে না পড়ে, সেজন্য স্কুলপর্যায়ে মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। শিক্ষকদের জন্য ট্রমা ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। তারা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করবেন।
এদিকে রোববার রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়া ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, চার দফা ভূমিকম্পের কারণে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে বেশি প্রভাব ফেলছে কোমলমতি শিশুদের ক্ষেত্রে। ঘরে-বাইরে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু এখন ভূমিকম্প। সেটি শিশুদের মনোজগতে প্রভাব ফেলছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের সামনে এ নিয়ে বেশি আলোচনা না করা উচিত। তাদের সাহস জোগাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা তদারকি করা দরকার। তবে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ঠুনকো কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকারি কোনো নির্দেশনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।