Image description
 

ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির চেয়েও দ্রুত ছড়ায় আতঙ্ক। আর এই আতঙ্কের বাহক হলো সোশ্যাল মিডিয়া। হোয়াটসঅ্যাপের ফরোয়ার্ড মেসেজ, ফেসবুকের পোস্টে ‘আর একটা বড় ভূমিকম্প আসছে’—এই ধরনের ভিত্তিহীন তথ্য বা ভবিষ্যদ্বাণী এখন নতুন সমস্যা তৈরি করেছে, যার নাম ‘ভূমিকম্প-ইনফোডেমিক’। অথচ এই গুজবের ওপর নির্ভর করে মানুষ জীবনরক্ষার সঠিক সময়টা মিস করে ফেলে। 

 

কেন ছড়ায় এই ‘ভদ্র গুজব’?

বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘ভদ্র গুজব’ বা ‘Good-Intention Rumor’ বলে থাকেন। মানুষ সাধারণত কাউকে সতর্ক করার বা সাহায্য করার মানসিকতা থেকে তথ্যটি যাচাই না করেই ফরওয়ার্ড করে। কিন্তু এই তথ্যের সূত্র হয় অজানা বিদেশি গণমাধ্যম, জ্যোতিষী বা স্থানীয় কোনো ভুল বার্তা। আপাতদৃষ্টিতে এটি সচেতনতা মনে হলেও, এটি আসলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। 

গুজবে কান দিলে ৩টি মারাত্মক বিপদ

ভূমিকম্পের গুজব সমাজে ৩টি বড় বিপদ তৈরি করে—

১. আসল সতর্কতাকে উপেক্ষা: বারবার মিথ্যা অ্যালার্ট পাওয়ার পর মানুষ যখন আসল জরুরি সতর্কতা বা সরকারি বার্তা আসে, তখন সেটিকেও গুজব ভেবে উপেক্ষা করে। 

২. প্যানিক ও দুর্ঘটনা: ভিত্তিহীন গুজবের কারণে মানুষ দ্রুত ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামে বা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটে, যা পদদলিত হওয়া বা অন্য দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। 

৩. জরুরি সেবার অপব্যবহার: মিথ্যা অ্যালার্টের কারণে ফায়ার সার্ভিস বা জরুরি সেবা কর্মীদের মনোযোগ অপ্রয়োজনীয় দিকে চলে যায়, যা সত্যিকারের জরুরি পরিস্থিতিতে বাধা সৃষ্টি করে। 

 

ভূমিকম্পের সঠিক তথ্য ও সতর্কতা কোথায় পাবেন?

ভূমিকম্পের সঠিক তথ্য বা সরকারি সতর্কতা জানতে কেবল নিম্নলিখিত তিনটি নির্ভরযোগ্য উৎসের ওপর নির্ভর করা উচিত—

১. বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD)

ভূমিকম্প হওয়ার তাৎক্ষণিক তথ্য (মাত্রা, উৎসস্থল ও গভীরতা) জানার এটিই বাংলাদেশের মূল ও সরকারি উৎস। BMD-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ নিয়মিত অনুসরণ করুন। কোনো বিদেশি ওয়েবসাইট বা অ্যাপে মাত্রা বা স্থান ভুল দেখানো হলেও, BMD-এর তথ্যই বাংলাদেশে চূড়ান্ত হিসাবে বিবেচিত হবে। 

২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় (MoDMR)

ভূমিকম্পের পর সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের করণীয় ও দীর্ঘমেয়াদি সতর্কতা জারি করা হচ্ছে, তা এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। শুধু MoDMR-এর প্রেস রিলিজ বা জাতীয় গণমাধ্যমে তাদের প্রচারিত বার্তা অনুসরণ করুন।

৩. Google Earthquake Alerts (অ্যান্ড্রয়েড সতর্কতা) 

 

আপনার স্মার্টফোন নিজেই এখন একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সতর্কতা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করতে পারে—

* কীভাবে কাজ করে: অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে বিল্ট-ইন এই ব্যবস্থাটি শত শত কোটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে মিনি-সিসমোমিটার হিসেবে ব্যবহার করে। কম্পন শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগেই আপনার ফোনে ‘Drop, Cover, and Hold’ বার্তাটি চলে আসে।

* নির্দেশনা: আপনার ফোনের সেটিংসে গিয়ে ‘ভূমিকম্প সতর্কতা’ (Earthquake Alerts) অপশনটি চালু আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।

গুজব ছড়ালে আপনার আইনি দায় কী?

মনে রাখবেন, গুজব ছড়ানো শুধু সামাজিক ক্ষতি নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। দেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন (Cyber Security Act) অনুযায়ী, যদি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

তাই নিজেকে এবং সমাজকে বাঁচাতে, কোনো তথ্য যাচাই না করে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো মেসেজ পেলে সেটির সত্যতা উপরোক্ত সরকারি উৎসগুলো থেকে যাচাই করে নিন।