Image description
 

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হলেও এর তীব্রতায় জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ঢাকার আশপাশে উৎপত্তিস্থল হওয়ায় বেশ ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

 
বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
 
জানা যায়, বাংলাদেশের আশপাশে বড় ভূমিকম্পের মধ্যে আছে ১৭৬২ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এটি ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এর ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ফেনী, এমনকি কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
 
এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত ভূমিকম্প ছিল ৮ দশমিক ৭ মাত্রার।
 
১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রায় এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্পগুলো ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসার শঙ্কা থাকে। এদিক থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ফেরত আসার সময় হয়ে গেছে।
 
তথ্য বলছে, ঢাকা শহরে মোট ২১ লাখ ভবন আছে। এর মধ্যে ছয় লাখ ভবন ছয়তলার ওপরে। বাকিগুলো ছয়তলার নিচে। বড় ভূমিকম্প হলে ছয় লাখ ভবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে।
 
বাংলাদেশের ঝুঁকি নিয়ে আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানান, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে বড় বড় ফল্ট আছে। মূলত, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ট আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। সারা পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে। এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। সেটা যখন শিলার ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন সেই শক্তি কোনো বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্টে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প।
 
বাংলাদেশ যে ফল্ট লাইনের কাছে আছে সেই তথ্য জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ফল্ট লাইন। বাংলাদেশ অঞ্চলে ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস হলো ডাউকি ফল্ট, যেটি শেরপুর থেকে শুরু জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে বিস্তৃত।
 
এদিকে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির গণমাধ্যমকে জানান, কিছুক্ষণ আগে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পটি মধ্যম বা মডারেট মাত্রার। যার শক্তি খুব বেশি নয়, কিন্তু অনুভূতি অনেকবেশি। তবে আপাতত আফটারশকের কোনো শঙ্কা নেই।


তিনি আরও জানান, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কিছু সময় আফটারশকের শঙ্কা থাকে, তবে সব সময় তা তীব্র হয় না।