Image description

উত্তরের শিল্পনগরী নীলফামারীর বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। কৃষির পাশাপাশি উত্তরা ইপিজেড জেলার মানুষের কিছুটা ভাগ্য বদল করেছে। তবে এবার এই অঞ্চলে চীনের সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল। হাসপাতালটি নির্মিত হলে চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় বাইরের দেশের নির্ভরতা কমবে। উন্নত চিকিৎসার সুবিধা প্রাপ্তির স্বপ্নে এখন উৎসবমুখর পুরো জেলাবাসী। 

গত ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক নোটিশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের আরাজি দারোয়ানি মৌজার প্রায় ২৫ একর জমির ওপর এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা হবে। এটি ১০০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল, যা সম্পূর্ণভাবে চীনা সরকারের অনুদানে গিফট প্রকল্প হিসেবে হাসপাতালটি দৃশ্যমান হবে। 

১০০০ শয্যা হাসপাতালে যে যে চিকিৎসা সুবিধা মিলবে 

উন্নতমানের এ হাসপাতালে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইউনিট, জরুরি বিভাগ, ক্যানসার ও হৃদরোগ চিকিৎসা ইউনিটসহ আধুনিক ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি। হাসপাতালটিতে থাকবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও সহায়তা কর্মী। যাতে উত্তরবঙ্গসহ দেশের মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবা মিলবে। এই হাসপাতাল শুধুমাত্র সাধারণ হাসপাতালে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং উন্নত বিশেষায়িত চিকিৎসা দিতে সক্ষম হবে। এছাড়া অঙ্কোলজি (ক্যান্সার), কার্ডিওলজি (হৃদরোগ), নেফ্রোলজি (কিডনি), ডায়ালাইসিসের সার্ভিস দিতে হাসপাতালে ২০০টি ডায়ালাইসিস যন্ত্র থাকবে। 

হাসপাতালটি নীলফামারী এবং তার আশপাশের এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমানে উন্নত বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য শুধু রাজধানী বা বড় শহরগুলোতে যেতে হয়, যা সময় ও খরচ উভয় দিকেই বড় চ্যালেঞ্জ। হাসপাতালটিতে উন্নত চিকিৎসা মিলবে এতে দেশের মানুষের বাইরের দেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার নির্ভরতা কমবে। 

হাসপাতালটি ঘিরে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন 

চীনের এই হাসপাতালটি দৃশ্যমান হলে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে ব্যাপক সুখবর বনে আনবে। সেটিকে ঘিরে হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণে রয়েছে ব্যাপক সম্ভবনা।  হাসপাতালটি নির্মাণ হলে জেলাজুড়ে দ্রুত বদলে যাবে অর্থনৈতিক চিত্র। হাসপাতালের নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই এলাকার মানুষ নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাচ্ছে। হাসপাতালটি নির্মাণ হলে সেখানে জনসমাগম কয়েক গুণ বাড়বে ছোট বড় ফার্মেসি, আবাসিক হোটেল, ভাড়া বাসার সংখ্যা ও নতুন উদ্যোক্তারা সেখানের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। এছাড়া নতুন সড়ক, ড্রেন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা কাঠামোর উন্নয়ন হবে। ফলে নীলফামারীর কেন্দ্রীয় শহর থেকে গ্রামীণ জনপদ পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় সহজ হবে ।   

হাসপাতাল ঘিরে দেশের বিভিন্নস্থানের রোগী ও পর্যটক আগমন  

১০০০ শয্যা চিকিৎসা সেবার আধুনিক হাসপাতালকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানের রোগী ও পর্যটকের ব্যাপক আগমন ঘটবে।  অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা, দক্ষ চিকিৎসক দল এবং সাশ্রয়ী ব্যয়ের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত পরিচিত পাবে এ হাসপাতালটি। হাসপাতালটি দৃশ্যমান হলে উত্তরের মানুষের ভাগ্য বদলে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের হবে কর্মস্থান। এতে চিকিৎসা নিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাসপাতালটিতে আসবে রোগীরা।  

হাসপাতাল থেকে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা 

উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে নীলফামারীতে ১০০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালকে ঘিরে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গতিশীল হয়ে উঠবে। হাসপাতালটি চালু হলে শুধু নীলফামারী নয়, রংপুর বিভাগসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও রোগীরা দ্রুত সময়ে বিশেষায়িত চিকিৎসা পাবেন। হাসপাতালটি দারোয়ানি টেক্সটাইল এলাকার সড়ক পথে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী আঞ্চলিক মহাসড়কের খুব কাছে হবে। এতে করে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরাসরি সড়কপথে হাসপাতালে পৌঁছানো যাবে। 

আবার ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরকারি ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসতে পারবেন। অপরদিকে রেলপথে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ও নীলফামারী রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে ঢাকা রাজশাহীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এতে করে সারাদেশের মানুষ খুব সহজেই সড়ক, বিমান ও রেলপথে আসতে পারবেন এ হাসপাতালে।  

প্রভাষক শিউলি বেগম বলেন, উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলায় চীনের হাসপাতাল হচ্ছে এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। আমরা হাতের নাগালেই উন্নত চিকিৎসা পাবো। এখানে শুধু আমাদের নয় পুরো দেশের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। 

আরেক বাসিন্দা বলেন, চীনের হাসপাতাল ঘিরে আমাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এটির ফলে যেমন ভালো চিকিৎসা পাবো তেমন অনেক মানুষের কর্মস্থান হবে। উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে হাসপাতালটি দৃশ্যমান হলে।  

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও নীলফামারী-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল বলেন, হাসপাতালটির ফলে এলাকার স্বাস্থ্য সেবার মান যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে। উন্নত চিকিৎসা নিতে এখন আর দেশের বাইরে যেতে হবে না।

জেলা গণপূর্ত কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাকিউজ্জামান বলেন, ডিজিটাল সার্ভেয়ারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। মাস্টারপ্লানের কাজ চলছে এরপরই কাজ শুরু হবে।  

নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, দারোয়ানি টেক্সটাইল এলাকার ২৫ একক জমিতে হাসপাতালটি হবে।  ইতোমধ্যে ডিজিটাল সার্ভেয়ারের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। হাসপাতাল দৃশ্যমান হলে উত্তরের মানুষ স্বাস্থ্য সেবার দিক দিয়ে এগিয়ে যাবে।