২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর আওয়ামী লীগের নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ। এর মধ্যে সমালোচক, লেখক, সাংবাদিক, সুশীল, আইনজীবী ও বিচারক রয়েছেন। শেখ হাসিনা তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালান এবং অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এসব ব্যক্তির মধ্যে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এবং লেখক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ মাহমুদুর রহমান, রাজনীতিক ও সাংবাদিক পিনাকী ভট্টাচার্য, শফিক রেহমান, ইলিয়াস হোসাইন, মুশফিকুল ফজল আনসারী, অলিউল্লাহ নোমান, কনক সরওয়ার, শাহেদ আলম, জাওয়াদ নির্ঝর, তাসনিম খলিলসহ অনেকে সরকারের দমন-পীড়ন, অন্যায় ও বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তারা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, আন্দোলন করেছেন। এটিও বলা হয়েছে রায়ে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের কথাও উল্লেখ করেছেন।রায় ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর, সাংবাদিক, তদন্ত সংস্থা, প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের সংঘটিত হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের প্রতিবেদন, অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য এভিডেন্সের ভিত্তিতে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়া হবে। ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রায় পড়া শুরু করেন। মাঝের অংশ পড়েন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ। সর্বশেষ অংশ অর্থাৎ আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ড পাঠ করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।
এতে আদালত প্রসঙ্গক্রমে বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে মানবাধিকার পরিস্থিতি, ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ এসেছে। আওয়ামী লীগের শোষণ, নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অধিকার অস্বীকার এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার অপচেষ্টার কথাও উঠে আসে।
মো. শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র্য, সরকার ও ক্ষমতাশালী মহলের অহংকার-নিপীড়নের অবসান হবে এবং স্বাধীনতা, সুখ ও মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।প্রসিকিউটর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
শফিউল আলম আরও বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকার নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, মিথ্যা মামলা, কারাবন্দি করা ও জোরপূর্বক গুমসহ একই কাজ করেছে। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।