Image description

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান ছয় মাসেও এগোয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে সাত মাস আগে অভিযোগ ওঠে- তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি-টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগের গোয়েন্দা তদন্ত করে প্রাথমিক প্রমাণও পায়; যার পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নিয়মিত অনুসন্ধানে শুরু করে সংস্থাটি।

জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। কিন্তু গত ছয় মাসে অনুসন্ধানের কোনো অগ্রগতি নেই। নাম প্রকাশ না করে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় অনুসন্ধান কার্যক্রম এগোয়নি।

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট দুদকের আরেক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়েই অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কিন্তু যে অভিযোগ, এর স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত আছে। তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে যাচাই-বাছাই করে সেই অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে এগোনো হবে।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে গত ২১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর দুদক তাঁর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ ও উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমির সমন্বয়ে একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে।

অব্যাহতি দেওয়ার পর সাবেক এপিএসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও গুঞ্জনের বিষয়টি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নিজেই দুদককে অনুসন্ধানের অনুরোধ করেছিলেন বলে ওই সময় জানান। গত ২৪ মে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে উপদেষ্টা লেখেন- কেউ যদি দুর্নীতিতে জড়ায়, সে যেই হোক, রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অঙ্গীকার। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্ব আমাদের নতুন বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলার প্রমাণ। আশা করি, দুদক নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে তদন্ত করবে এবং সত্য উদ্ঘাটিত হবে। আমরা সততা, দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের এমন দৃষ্টান্ত রেখে যেতে চাই, যা অনুকরণীয় হবে।

এর আগে ওই গত ২৪ মে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় মোয়াজ্জেম হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও এনআইডি ব্লক করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক মিনু আক্তার সুমি নিষেধাজ্ঞা ও ব্লক চেয়ে আবেদন করেন। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করলে ২২ মে মোয়াজ্জেম হোসেন দুদকে হাজির হন। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত দুদকের উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমির নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের কাছে মোয়াজ্জেম দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন; একটি পক্ষ ছাত্রদের টার্গেট করে মিথ্যা ছড়াচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, তাঁর পদত্যাগ নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রকাশ হয়েছে। বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতির জন্য ২৫ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেছেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ভুল ছিল জানিয়ে, দুর্নীতির অভিযোগ পদত্যাগের পর এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

ছয় মাস পরও অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রমে অগ্রগতি না থাকার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা মুখ খোলেননি। তবে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়টি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।