Image description

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক বৃদ্ধ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন।

গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের মুখী গ্রামে এক কিশোরীকে বাড়িতে একা পেয়ে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন আব্দুল করিম (৭৬) নামে ওই বৃদ্ধ। ঘটনাটি টের পেয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গাছে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। পরদিন বুধবার (৫ নভেম্বর) কিশোরীর বাবার দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

গ্রেফতারের পর আব্দুল করিম নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন। তবে গফরগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইফুল আলম বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা নন।’

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ওয়েবসাইটে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই’-এর গফরগাঁওয়ের তালিকায় ৩৯৫ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। সেখানে ‘মো. আব্দুল করিম’ নামে একজনের নাম থাকলেও তার গ্রামের নাম মহিরখারুয়া এবং বাবার নাম মৃত গিয়াস উদ্দিন আহাম্মদ। অন্যদিকে গ্রেফতার আব্দুল করিমের গ্রামের নাম মুখী ও বাবার নাম মৃত কেরামত আলী। অর্থাৎ উভয়ের তথ্য ভিন্ন, যা নিশ্চিত করে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা নন।

এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইফুল আলম বলেন, ‘প্রথমে ঘটনাটি জানার পর আমার মন খারাপ হয়ে যায়। পরে আমার কাছে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি তালিকা যাচাই করি, কিন্তু কোথাও এই আব্দুল করিমের নাম পাইনি। ফলে বিষয়টি পরিষ্কার যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন।’

তিনি আরও জানান, ‘তথ্য জানাতে গিয়ে তাড়াহুড়োতে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আব্দুল করিমের পরিবর্তে ভুলবশত মো. কবির ও মুখী গ্রামের পরিবর্তে বীর খারুয়া লেখা হয়েছিল, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করা হবে।’

সাইফুল আলম বলেন, ‘মশাখালী ইউনিয়ন কিংবা মুখী গ্রামে সরকারি তালিকায় আব্দুল করিম নামে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নেই। তিনি যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হন, তাহলে প্রমাণপত্রসহ নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, ‘ঘটনার পর গফরগাঁও কমান্ডারকে বিষয়টি যাচাই করতে বলেছিলাম। যাচাই করে দেখা গেছে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা নন।’

এ বিষয়ে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, ‘গ্রেফতারের পর আব্দুল করিম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তবে যাচাইয়ের সুযোগ পাওয়া যায়নি। কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রেকর্ড করে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনোতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘আব্দুল করিম মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা তার সার্টিফিকেট ছাড়া নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। আপাতত তিনি মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার।’