Image description

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সঞ্চয়পত্র রক্ষণাবেক্ষণ সিস্টেমে চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে প্রতারকচক্র একজন গ্রাহকের বড় অঙ্কের টাকা তুলে নিয়েছে। গ্রাহকের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে অন্য ব্যাংকের উপশাখায় টাকা পাঠিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়। অভিনব জালিয়াতিটি হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নাকি অন্য কোনোভাবে ঘটানো হয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে কেনা একটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ২৫ লাখ টাকা তুলে নিয়ে গেছে জালিয়াতচক্র। গ্রাহক অগ্রণী ব্যাংকের প্রেস ক্লাব শাখার অ্যাকাউন্টের বিপরীতে এ সঞ্চয়পত্র কেনেন। তবে হঠাৎ গত সোমবার গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই তার সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখায় স্থানান্তর করা হয়। ওই দিনই ব্যাংকটির শ্যামলী শাখা থেকে পুরো অর্থ তুলে নেয় জালিয়াতচক্র।

সূত্রমতে, শুধু একটিই নয়; আরো দুটি সঞ্চয়পত্র অ্যাকাউন্টে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে সেসব প্রচেষ্টা ঠেকাতে সক্ষম হয়। এদিকে এনআরবিসি ব্যাংকের শ্যামলী শাখা ও সংশ্লিষ্ট উপশাখার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আবার সঞ্চয়পত্রের সার্ভার যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন, তাই তারাও একটি কমিটি গঠন করেছে। এখানে সার্ভারের নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্রটি রয়েছে, তা দুই তদন্তকারী দল খতিয়ে দেখবে। এছাড়া আজ বুধবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিনিধিদল ব্যাংকের উপশাখা পরিদর্শনে যাবে।

২০১৯ সালে একই নামে একাধিক সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করে সরকার। এর মাধ্যমে যেখান থেকেই সঞ্চয়পত্র কেনা হোক, একটি ডেটাবেজে তার তথ্য জমা হয়। ফলে কেউ একই নামে একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বা ব্যাংক পরিবর্তনের জন্য গ্রাহককে ক্রয়কৃত শাখায় আবেদন করতে হয়। তবে এই ২৫ লাখ টাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে কোনো আবেদন আসেনি। ফলে প্রশ্ন উঠেছেÑঅভ্যন্তরীণ কারো যোগসাজশ, নাকি সেন্ট্রাল সার্ভারে হ্যাকিং করে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে? তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নির্দিষ্ট মেয়াদে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারে। সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেন। মাসে মাসে তার সুদ ওই অ্যাকাউন্টে চলে যায়। মেয়াদ শেষ হলে পুরো অর্থও ওই অ্যাকাউন্টে যায়। তবে হঠাৎ কিছু ব্যাংকে সংকট তৈরি হওয়ার কারণে অনেকে টাকা তুলতে পারেননি। এ অবস্থায় যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয় সেখানে আবেদনের মাধ্যমে গ্রাহক ব্যাংক পরিবর্তন করতে পারেন। তবে এই ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক যে অ্যাকাউন্ট দিয়েছেন, তা অটো পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহক জানিয়েছেন, তিনি কোনো পরিবর্তনের অনুরোধ করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ঘটনাটি জানতে পারার পরপরই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি মতিঝিল থানায় জিডি করা হয়েছে।

মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, ঘটনাটির গুরুত্ব বিবেচনায় বিশেষ একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।

বিনিয়োগের জন্য মধ্যবিত্তের অন্যতম পছন্দ সঞ্চয়পত্র। এ বিনিয়োগ নিরাপদ ও মুনাফার হারও বেশি। ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়Ñএমন চিন্তা থেকে অনেকে সঞ্চয়পত্র কেনেন। অনেকে সংসার খরচের একটি অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে জোগান দেন। বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে। এগুলো হলোÑপরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এসব সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারও কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।