Image description
 

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রাখা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। প্রতিবাদ আর ক্ষোভের আগুনে মশাল প্রজ্বলন করে তিস্তা অববাহিকাজুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিস্তা পাড়ের প্রায় লাখো মানুষ।

 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দফার কর্মসূচিতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও রংপুরের ১১টি স্থানে একযোগে এই মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।

 

লালমনিরহাট জেলার তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চর পয়েন্টে এই মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এ সময় বিক্ষুব্ধ তিস্তাবাসীর কণ্ঠে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’, ‘পানি আগ্রাসন মানি না মানব না’, ‘পানির ন্যায্য হিস্যা চাই-দিতে হবে দিতে হবে’, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু কর-করতে হবে’, ডাক দিয়েছেন দুলু ভাই-জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

Teesta 1

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে তিস্তাকে শুকিয়ে মারার জন্য ভারতকে পানি আগ্রাসী দাবি করেন। এর আগে বিগত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করে তিস্তা নদীবেষ্টিত ৫ জেলার মানুষ। ‘তিস্তা আমার মা, ভারতের হতে দিব না’; ‘জিয়ার মতো কোদাল ধরো, তিস্তা নদী খনন করো’নানা শ্লোগানে মুখরিত গোটা তিস্তা এলাকা।

 

Teesta 3

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আব্দুর রহমান, কফিল উদ্দিন, বাচ্চু মিয়া, অলিমা বেগমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তাকে শুষ্ক মৌসুমে চেনাই যায় না। পানির সংকটে শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়। শুধু নদী নয়, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলীন। জেলে আর মাঝিদের নেই কর্মব্যস্ততা। থমকে গেছে লাখো পরিবারের উপার্জন। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। তারা ভারতীয় আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান ।

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে আমাদের এই অঞ্চলে। ভারত বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা হয়। পক্ষান্তরে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি মেলে না। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হলেও সুফল মেলেনি এখনো। ফলে শুস্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১২৫ কিলোমিটার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে হেঁটেই তিস্তা পার হওয়া যায়, তাই মাঝিদের আর নৌকা বাইতে হয় না। এ কারণে বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। পানির অভাবে কৃষকরা কৃষি উৎপাদন করতে পারছেন না। নদীপাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। ছাত্র- জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদ বিদায়ের পর আর দিল্লির তাঁবেদারি নয়, তিস্তা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এ অঞ্চলের নদীপাড়ের মানুষজন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে গোটা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন-চিত্র। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগে এখনো কোন রাজনৈতিক সংগঠন বিরোধিতা করেনি। বরং দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করে আসছেন কৃষক-জনতার।

জনগণ তিস্তা নিয়ে আর কোনো রাজনীতি প্রত্যাশা করে না, তারা অতিদ্রুত দৃশ্যমান কাজ দেখতে চায়। তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ অহেতুক বিলম্ব করা হচ্ছে। দ্রুত চীনের টাকা তিস্তা মহাপ্রকল্প শুরু করা উচিত। তা না হলে তিস্তা অববাহিকা উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে। চীনের টাকায় তিস্তা প্রকল্প হলে নদীতে ১২ মাস পানি থাকবে; মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ দেখতে মুখিয়ে আছেন নদীপাড়ের মানুষ।