Image description
অত:পর ৩৫ বছর পর চবি বা চাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হলো এবং ফলাফল যা হবার তাই হলো। তবে ১৯৯০ সালের শেষ নির্বাচনে শক্তিশালী ছাত্রশিবির বিরোধী ঐক্য জোটের কাছে শিবির পরাজিত হলেও বহুদিন ক্যাম্পাসের দখল দারিত্ব তারা ছাড়েনি। আর তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রদল বলে কিছু ছিলনা বললেই চলে। আমরা যারা চীন পন্থী বা জিয়া পন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলাম কখনো ছাত্র দলের কাউওকে খুঁজে পাইনি। '৯০ এর নির্বাচনে শান্তনা পুরষ্কার হিসেবে শামীম নামে ছাত্রদলের একমাত্র প্রার্থীকে এজিএস পদে জেতার সুযোগ করে দেয়া হয় আর ঠিক এবারো দেখলাম সেই একই পদে ছাত্র দলের একমাত্র প্রার্থী জিতেছে, বাদবাকী সব শিবির।
 
বলতে গেলে গোটা ' ৮০ এর দশক বা এরশাদ যুগে জামাত শিবিরের বিরুদ্বে লড়াই করেছি আমরা শিক্ষকরা কারন ছাত্র লীগ ছিল ক্যাম্পাস ছাড়া। শিবির সামান্য উৎপাত করলেই আমরা দশগুন বাড়িয়ে পত্রিকায় স্টেটমেন্ট দিতাম এবং একপর্যায়ে শিবিরের দশ নেতাকেও বিশ্ববিদ্যালয় থেক বহি:ষ্কার করেছিলাম। কিন্তু এর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে দৃশ্য একবারে পালটে যায়। আওয়ামী ভিসি প্রফেসর আবদুল মন্নান ও মেয়র মহিউদ্দিনের যৌথ উদ্দোগে শহর থেকে কয়েক বাস সন্ত্রাসী এসে এবং পুলিশের সাহায্য নিয়ে শিবিররের উপর আক্রমন চালায়। অনেকক্ষন যুদ্ব চললেও পাঁচটি হলের মধ্যে দুটি শিবির ধরে রাখতে সক্ষম হয় তবে ফ্যাকাল্টি ভবনগুলি মোটামুটি ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। ফলে দেখা যায় এর আগের বিশ বছরের ইতিহাসে চবিতে একজন ছাত্র মার্ডার হলেও আওয়ামী শাসনের পরবর্তী দু বছরেই নয় জন ছাত্র নৃশংস হত্যার শিকার হয় যার প্রায় সবই ছিল ছাত্র শিবিরের।
 
এর আগে কোন দিন চবি ক্যাম্পাসে কোন দিন চাঁদাবাজি ছিলনা কিন্তু ছাত্র লীগ আসার পর কিছুদিন পরপরই কন্ট্রাক্টারেরা কাজ বন্দ্ব করে দিত চাঁদাবাজীদের অত্যাচারে। আমি এক কন্ট্রাক্টার কে ভিসি অফিসে কাঁদতে দেখেছি লাঞ্চিত হওয়ার কারনে। শিক্ষকদের রেসিডেন্টশিয়াল এলাকায় গিয়েও এসব মাস্তানরা উৎপাত করতো। প্রগতিশীল শিক্ষকদের নেতা হিসেবে আমিও সাধারন শিক্ষদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হলাম, আমরা কি কুমীর তাড়িয়ে বাঘ ডেকে আনলাম? এতো গেলো ১৯৯৬_২০০০ সালের গল্প। এরপর আরেকবার কয়েক বছরের জন্য খালেদা জিয়ার মোটামুটি শান্তিপুর্ন শাসনের বিরতির পর ২০০৯ সালে পুনর্বার শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে পরবর্তী ১৮ বছরে দেশের কি বীভৎস অবস্থা হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই বলতে হয় দেশের বৃহত্তর পরিসরে মৌলবাদের উত্থান নিয়ে কিছুটা শংকা দেখা দিলেও ক্যাম্পাসের জন্য বোধ হয় আপাতত: শিবিরই সবচেয়ে নিরাপদ। এরা চাঁদাবাজি করবেনা, প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করবেনা, মেয়েদের উত্যক্ত করবেনা, হলে সীট বিক্রি করবেনা। যদি তারা ছাত্রীদের পোশাক আশাক ও চলাফেরার স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ না করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান নিয়ে ঝামেলা না করে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে তাহলে হয়ত তাদের বিজয় দীর্ঘস্থায়ী হবে।
 
 
 
 
 
 
হায়াত হোসেন