
ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির এমন আচরণ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেকে ভিসির সঙ্গে সাহসের আচরণকে শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, সাহস দৃঢ়তার সঙ্গে ভোটে অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র। সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে গণেশ চন্দ্র বলেছেন, শিক্ষকরা একটি জাতির মেরুদণ্ড তৈরির প্রধান কারিগর। এজন্য যুগে যুগে শিক্ষকরা সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং সম্মানের। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় আমার শিক্ষকদের সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে আসছি। আমি কখনো কোনো দিন সচেতন মনে অশ্রদ্ধা করে বা অসম্মান করে কোনো শিক্ষককে কথা বলিনি। তবে কিছু কিছু সময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায় করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক ভাষায় আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, প্রতিবাদের ভাষা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে আলাদা হয়ে থাকে। তারপরও গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের যে বাক্য বিনিময় হয়েছে তা ছিল একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে।
ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, আমরা বলবো যে, সেই অস্বাভাবিক বা উত্তপ্ত পরিস্থিতি কেন তৈরি হল, সেই দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন হিসেবে মাননীয় ভিসি মহোদয় এড়াতে পারেন না। তারপরও আমি এতটুকু বলবো, সেই বাক্য বিনিময়ের সময় ভিসি মহোদয়ের প্রতি আমার যে সম্মান ছিল বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
সাহস বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই আগামীতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয় প্রশাসনিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে মাননীয় ভিসি মহোদয় তার অতীতের সব ব্যর্থতা নির্মূল করে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর আধুনিক গবেষণামূলক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমরা সবসময় আমদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করব।
গণেশ চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাকা ব্শ্বিবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমাদের যে প্রশাসন নিয়োগ হয়েছে সেই প্রশাসনের প্রতি আমাদের একটা আস্থার জায়গা ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেগুলোর স্মারকলিপি দিয়েছিলাম, বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলাম, সেই অভিযোগগুলো করার পরে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পারিনি। ডাকসুকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছি, ডাকসুকে অধিকতর ফলপ্রসূ করার জন্য। একটি প্রকৃত ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আমাদের দাবি দাওয়া জানিয়েছিলাম। এমনকি নির্বাচনের দিনেও আমরা কিছু অনিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন বরাবর দেওয়ার পর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আমরা মাননীয় ভিসি মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম যে, কেন এসব ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি বলেন, তখন ভিসি মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আসলে এটাতো ভোটের মাঠ, সেদিন তো এটা পাঠদান কক্ষ ছিল না। এখানে ভিসি মহোদয় নির্বাচন পরিচালনার কাজে ছিলেন, একই সঙ্গে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। নির্বাচনে আমরা যখন অনিয়ম দেখেছি, অব্যবস্থাপনা দেখেছি, অমাদের জায়গা থেকে আমরা সেখানে ভিসির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তিনি তার জায়গা থেকে কথা বলেছেন। দুপক্ষের কথা বলার সময় তিনিও যেমন উত্তেজিতভাবে কথা বলেছেন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন, আমরাও আমাদের জায়গা থেকে প্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করেছি। তিনি তার জায়গায় ঠিক বলে মনে করেন। আমরা আমাদের জায়গায় ঠিক বলে আমরা মনে করি। এটা হচ্ছে গণতেন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ের সঙ্গে আমাদের যে বাগবিতণ্ডা হয়েছে সেটাতে অবশ্যই আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় রয়েছে।
‘তারা যদি একটি প্রকৃত ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রথম থেকে কাজ করত হয়তো বা আমরা এভাবে কারো সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় আমরা জড়াতাম না। আমি সব পক্ষকে বলব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ আমরা যারা শিক্ষার্থীরা আছি, যারা রাজনীতি করি ভবিষ্যতে একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি সুন্দর আধুনিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণে সবার চেষ্টা ছাড়া আসলে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করা সম্ভব না।’
‘আমি বিশ্বাস করি যে শিক্ষকদের সঙ্গে আপনি বাগবিতণ্ডায় জড়াবেন বা বাগবিতণ্ডয় জড়াবেন না বিষয়টা ওই জায়গায় না। আমাদের বিষয়টা হলো ওই পরিবেশ সৃষ্টি কেন হলো? তারপরও শিক্ষক হিসেবে আমরা অবশ্যই মাননীয় ভিসি মহোদয়সহ প্রশাসনে যারা আছেন, তাদেরকে তো অবশ্যই আমরা শিক্ষক হসেবে সম্মান করি। একই সঙ্গে তারা যেহেতু প্রশাসনে ছিল, সেই প্রশাসনে আছে, প্রশাসনে তাদের যদি ব্যর্থতা থাকে আমরা ছাত্রসংগঠন হিসেবে অবশ্যই তাদের ব্যর্থতাগুলো তুলো ধরব। সেটা একেক সময় একেক ভাষায়।’
গণেশ চন্দ্র বলেন, প্রতিবাদের ভাষা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে আলাদা হয়, একেক জনের কাছে একেক রকম মনে হয়। তারপরও আমরা বলছি সব ধরনের আলোচনা-সমালোচনা আমরা সাদরে গ্রহণ করি। এবং সে আলোচনা-সমালোচনাকে সমন্বয় করে আমরা আমাদের কথা বলার চেষ্টা করি।
সেদিনের ঘটনার পর এই পর্যন্ত অনেকে এটার (ভিসির সঙ্গে সাহসের উত্তেজনা) সমালোচনা করছেন, আমি তাদের উদ্দেশে আবারও একই কথা বলব, তাদের এই আলোচনা-সমালোচনাকে অবশ্যই আমি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছি। একই সঙ্গে আমি আমার স্কুল এবং কলেজের সব শিক্ষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। একই সঙ্গে সারা বাংলাদেশে নীতিবান শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানান ঢাবি ছাত্রদলের এই নেতা।