Image description

বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য স্থানীয় জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার বিধান বাতিলে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। যা এভিয়েশন খাতে নতুন বিতর্ক তৈরি করবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। এ উপলক্ষ্যে আজ বুধবার সচিবালয়ে বিকাল ৪টায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হবে।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব রুমানা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বিদেশি অপারেটর কর্র্তৃক বাণিজ্যিক বিমান পরিবহন সেবা প্রদানের জন্য একক বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়ে এই আলোচনা হবে। এ সভায় বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সকল বিদেশি এয়ারলাইন্সের জিএসএ-এর একজন প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে শুধু রাজস্ব ক্ষতি বা বাজারে স্বচ্ছতা হ্রাস নয়, এই উদ্যোগের ফলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসতে পারে কর্মসংস্থানে। বর্তমানে জিএসএ কার্যক্রমে সরাসরি পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছেন, আর পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল আরো প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ফলে এ বিধান বাতিল হলে অন্তত ২৫ হাজার মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জিএসএ খাতে কর্মসংস্থানের চিত্র : বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর বিক্রয়, প্রচার, বিপণন, যাত্রীসেবা ও কার্গো অপারেশনের বড় অংশ পরিচালনা করে থাকে স্থানীয় জিএসএ প্রতিষ্ঠানগুলো। এই খাতে কর্মরত পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মী অফিস পরিচালনা, টিকিট বিক্রয়, কার্গো হ্যান্ডলিং, গ্রাহকসেবা ও টেকনিক্যাল সাপোর্টে যুক্ত। তাদের সঙ্গে পরিবহন, ট্রাভেল এজেন্সি, আইটি, বিজ্ঞাপন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টসহ আরো প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আয়-রোজগার করছে। কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালদিভিয়ান, থাই এয়ার এশিয়া ও এয়ার এশিয়ার জিএসএ টাস গ্রুপের পরিচালক কাজী শাহ মুজাক্কের আহাম্মেদুল হক বলেন, জিএসএ শুধু ব্যবসা করে না, এটি আসলে একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে। এ খাতে হাজারো পরিবার সরাসরি নির্ভরশীল। যদি হঠাৎ এ ব্যবস্থা বাতিল হয়, তাহলে এই বিপুল কর্মশক্তি অকার্যকর হয়ে পড়বে।

কর্মসংস্থান কমার সম্ভাব্য প্রভাব : জিএসএ বাতিল হলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সরাসরি নিজস্ব অফিস খুলে সীমিতসংখ্যক কর্মী নিয়োগ করবে। এতে বহুমাত্রিক কর্মসংস্থান ধসে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বিদেশি এয়ারলাইন্সের স্থানীয় জিএসএ অফিসগুলোয় একজন কর্মী থেকে শুরু করে শতাধিক পর্যন্ত কর্মী নিয়োজিত থাকে। এ ব্যবস্থার পরিবর্তে যদি বিদেশি এয়ারলাইন্স সরাসরি পরিচালনা করে, তবে হয়তো পাঁচ বা দশজনকে নিয়োগ দিলেই তাদের কাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। ফলে বিপুলসংখ্যক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীর চাকরি হারানোর ঝুঁঁকি তৈরি হবে।

দেশের এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে কর্মসংস্থান সুযোগ ক্রমেই সীমিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে জিএসএ খাত একটি শক্তিশালী নিয়োগদাতা হিসেবে কাজ করেছে। এই ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে শুধু চাকরির সংখ্যা কমবে না, দক্ষ জনবলও বিদেশে চলে যাবে।

প্রবাসী যাত্রীদের ওপর প্রভাব
জিএসএ ব্যবস্থা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্থানীয় অফিসের মাধ্যমে সহজে টিকিট বুকিং, পরিবর্তন বা অভিযোগ সমাধানের সুযোগ পান। জিএসএ বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রীদেরকে বিদেশি এয়ারলাইন্সের আঞ্চলিক অফিস বা অনলাইন সাপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হবে। এতে একদিকে কর্মসংস্থান কমবে, অন্যদিকে প্রবাসী যাত্রীদের ভোগান্তিও বাড়বে।

টিকিটের মূল্য ও জবাবদিহি
কর্মসংস্থান সংকটের পাশাপাশি টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও জোরালো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিএসএ বাতিল হলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো স্থানীয় তদারকি কমিয়ে দেবে, বাজারে জবাবদিহি থাকবে না। এতে তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে পারবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যেই এ আইন পুনর্বিবেচনার আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মসংস্থান ও বাজার স্থিতিশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় একদিকে যেমন হাজারো পরিবার জীবিকা হারাবে, অন্যদিকে বিমান ভ্রমণ আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।