
মোহাম্মদ খালেদ রহিম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব থেকে দুদকের সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন দু’সপ্তাহও হয়নি। তাকেই এখন আবার শিক্ষার মতো বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব করার জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। খোদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ তাকে শিক্ষা সচিব করার জন্য ব্যাপক তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার এর কাছে এ ব্যাপারে সুপারিশ করেছেন। এমনকি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরেও একই সুপারিশ করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের দিন এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার জের হিসেবে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব পদ থেকে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। সেই থেকে পদটি শূন্য রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মো. মজিবর রহমান সচিবের রুটিন পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পদায়ন করার কথা সিনিয়র সচিবদের মধ্য থেকে কাউকে। কিন্তু তা না করে প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের মোহাম্মদ খালেদ রহীম, যিনি সবেমাত্র সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাকেই এ পদে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের এমন নিয়মবহির্ভুত তৎপতাকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশাসনে বর্তমানে সচিব পদে যারা কর্মরত আছেন এরমধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র ব্যাচ হলো ১৫তম। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বাইরে নিয়মিত কর্মকর্তা হিসেবে সচিব পদে ১০ম ব্যাচের ১ জন, ১১তম ব্যাচের ১৬ জন এবং ১৩তম ব্যাচেরও অনেকে কর্মরত আছেন। ১৫তম ব্যাচের এ পর্যন্ত মোট ১০ জন সচিব হয়েছেন। তারমধ্যে ১৫তম ব্যাচেরও সর্বশেষ পর্যায়ে গত ১৬ জুলাই দুদকের সচিব পদে পদোন্নতি পান মোহাম্মদ খালেদ রহীম। তাছাড়া তিনি আওয়ামী সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত।
দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমের চাকরির বৃত্তান্ত পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলের প্রথমদিকে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে একাধিকবার বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু তারপরই আওয়ামী লীগের এমন ‘লাইন’ পেয়ে যান, যারফলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উপসচিব পদে পদোন্নতির এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পদেও পদায়ন পান। তারপর থেকে বরাবর ভালো পদায়নেই ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগ আমলে আর কোনো পদোন্নতিতেও তাকে সামান্যতম বেগ বেতে হয়নি। যুগ্মসচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সিইডিপি (কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট)-এ এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইং উন্নয়ন’র দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ আমলে।
অবাক ব্যাপার হলো, ৫ আগস্টের গণঅভ্যূত্থানের পর রহস্যজনকভাবে মোহাম্মদ খালেদ রহীমের ভাগ্যের আরো দ্রুত উন্নতি ঘটে। সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের বিশেষ আশীর্বাদে তিনি রাতারাতি আরো ক্ষমতাবান কর্মকর্তা হয়ে উঠেন। সচিব আব্দুর রশীদ শিক্ষা সচিব পদে পদায়ন পাওয়ার পর খালেদ রহীমকে প্রথমে মন্ত্রণালয়ের কলেজ উইংয়ের দায়িত্ব দেন। এরপরে প্রশাসন উইংয়ের দায়িত্বেও থাকেন কিছুদিন। শেখ আব্দুর রশীদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার পর খালেদ রহীমকেও সঙ্গে নিয়ে আসেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও গুরুত্বপূর্ণ উইংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। আওয়ামী সুবিধাভোগী কর্মকর্তা হিসেবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যেখানে কোনোরকমে চাকরি টিকিয়ে রেখে ডাম্পিং পদায়নে থাকাটাই ছিল খালেদ রহীমের জন্য স্বাভাবিক, অথচ তাকেই সচিব পদে পদোন্নতি এবং এরসঙ্গে দুদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মস্থলে পদায়নেরও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এখন আবার শিক্ষা সচিব পদে পদায়নেরও জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, সকল নিয়ম-কানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব পদে এমন কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন এখনো- যারা আওয়ামী লীগ আমলে একটিও পদোন্নতি পাননি, পদায়নে চরম বৈষম্যসহ নানা হয়রানি তো ছিলই- এদের পদোন্নতির পরিবর্তে আওয়ামী সুবিধাভোগী খালেদ রহীমকে কেন একের পর এক বিশেষ ও অনৈতিক সুবিধা দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, এর রহস্য তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না।
সিদ্দিক জোবায়ের ছিলেন ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। শিক্ষা সচিব পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োজিত ছিলেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিতে নতুন কাউকে আর প্রশাসনের সচিব পদে নিয়োগ করা হবে না। সেই হিসেবে সিনিয়র সচিবদের মধ্যে ১ জন আছেন ১০ম ব্যাচের (অবশ্য, এই ব্যাচের এখনো একাধিক কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদায়নে আছেন)। ১০ম ব্যাচের যিনি সচিব পদে আছেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে অপসারণের দাবি আছে ৫ আগস্টের পর থেকেই। এরপরে আসে ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম। এদের মধ্য থেকেই একাধিক কর্মকর্তার নাম শিক্ষা সচিব হিসেবে আলোচনায় ছিল গত এক সপ্তাহ ধরে। তারমধ্যেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের অবৈধ তদবিরের জোরে সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন মোহাম্মদ খালেদ রহীম, এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
শীর্ষনিউজ