
রাজধানীর একমাত্র ১২ লেনের পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফিট সড়ক। এ সড়কটি উদ্বোধনের পর ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করলেও এখন সেটা দিনদিন গতি হারাচ্ছে। দখলে চলে যাচ্ছে অটোরিকশার। কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটি দুই পাশেই প্রতিযোগিতা করে চলছে তিন চাকার এ বাহনটি। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উল্টোপথেও। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে যানজটও। অবৈধভাবে চলাচল করলেও পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন দেখা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড মোড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এখান থেকে কাঞ্চন ব্রিজ ও নীলা মার্কেট যাচ্ছে এসব অটোরিকশা। আবার আসছেও। সার্ভিস লেনগুলো থাকে এসব অবৈধ অটোরিকশার দখলে। প্রতিদিনই কয়েক শ রিকশা এ সড়কে চলাচল করে। প্রতিটি সংযোগ সড়ক দিয়ে অটোরিকশাগুলো সড়কে প্রবেশ করে। বিশেষ করে নীলা মার্কেট থেকে এবং পূর্বাচল ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে সড়কে আসছে বেশি। একই সঙ্গে উল্টোপথেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ এ যানটি। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত ছয় মাসে ১০টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দ্রুতগতির সড়কে কম গতির রিকশা চলাচল করায় যানজটও বাড়ছে। বিশেষ করে কুড়িল বিশ্বরোড ও কাঞ্চন ব্রিজের একটু আগেই অর্থাৎ ৩০০ ফিট সড়কের মাথায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। যাত্রী নামানো এবং ওঠানো ও সারি সারি লাইনে রিকশাগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিধিনিষেধ না থাকার কারণে চলাচল করছে বলে জানান চালকরা।
জানতে চাইলে অটোরিকশা চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিতই এ সড়কে চলাচল করছি। যাত্রী আনা-নেওয়া করছি। কেউ কিছু বলছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো অনুমতি নেই। তবে ৫ আগস্টের আগে এ সড়কে উঠতে দিত না পুলিশ। ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাধা দেয় না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে এ চালক বলেন, ঝুঁকি তো আছেই। জীবন মানেই ঝুঁকি। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। তবে যাত্রীরা আসায় আমরা গাড়ি চালাই। চাঁদার প্রসঙ্গে ইসমাইল বলেন, চাঁদা নেই, তবে স্ট্যান্ডে রিকশা প্রতি ২০ টাকা দিতে হয়।
কুড়িল বিশ্বরোডে কথা হয় প্রাইভেট কার চালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ সড়কটি দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করি। বিদেশি যাত্রী নিয়ে নরসিংদী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও সিলেটে যাতায়াত করি। কিন্তু এ সড়কটি দ্রুতগতির হওয়ায় আমরা গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিই। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এ সড়কটিতে অটোরিকশা চলাচল শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংখ্যা। এখন চাইলে গাড়ির গতি বাড়ানো যায় না। কারণ কোন সময় গাড়ির সামনে চলে আসে অটোরিকশা।
তিনি আরও বলেন, দ্রুতগতির সড়কে অটোরিকশা চলাচল করায় আমাদের গতিও কমে যাচ্ছে। আর কুড়িল, কাঞ্চন ব্রিজের দিকে প্রায়ই যানজট থাকে। কারণ অটোরিকশার স্ট্যান্ড থাকায় তাদের দখলে থাকে সড়কটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের গুলশান জুনের ডিসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করি। অনেকগুলোকে ডাম্পিংও করা হয়েছে। আবার অনেকগুলোকে এ সড়কে চলাচল করবে না এমন শর্ত ও মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি, এ অবৈধ বাহনটি যেখানে তৈরি হয় সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করব। কারখানা বন্ধ ও সিলগালা করা হবে। একটার পর একটা পদক্ষেপ আমরা বাস্তবায়ন করছি।