Image description
রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ ।

প্রায় প্রতিদিন ঢাকায় বিস্ফোরিত হচ্ছে ককটেল। জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসব ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার এমন অপচেষ্টায় যুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে জনমনে। বিষয়টি নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর টালমাটাল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর। এমন অবস্থায় ককটেল বিস্ফোরণসহ ছোট-বড় সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নইলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটতে পারে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সহিংসতা বেড়েছে। বিশেষ করে ককটেল বিস্ফোরণ। এনসিপির দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে জনসমক্ষে এসব ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। এ ধরনের খণ্ড খণ্ড ঘটনা বড় সহিংসতার পূর্বাভাস দিচ্ছে। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও সজাগ ও সতর্ক হতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হলে ক্ষমতাচ্যুতদের গায়ে জ্বালা থাকে। তারা পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়। এসব কাজে সফল হলে তারা বড় সহিংসতা তৈরিতে লিপ্ত হয়। যেভাবে ককটেল বিস্ফোরণ হচ্ছে, তাতে পরিবেশ কিন্তু সেদিকে যাচ্ছে। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এমনিই দেশের নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তাই অপরাধীদের এখনই শনাক্ত করতে হবে।

তথ্যমতে, সর্বশেষ বুধবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর আগে ২ জুলাই রাতে দলটির কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। ২৩ জুন প্রায় একই জায়গায় দলটির ঢাকা মহানগরের পদযাত্রার গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। মূলত নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নেতাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান। ফলে পরিকল্পিতভাবে দলটির কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করা হচ্ছে।

এছাড়া গত ৬ জুলাই রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। একই দিন মহাখালীর এসকেএস টাওয়ারের সামনে একই ঘটনা ঘটে। ৭ জুলাই প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ৩০ জুন হাতিরপুলে রাজনৈতিক দল গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ২৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ককটেল-সদৃশ বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটে।

১৬ জুন সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দিন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার শুনানির দিন ছিল।

শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সম্প্র্রতি সারা দেশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবহুল এলাকা, বিভিন্ন সংস্থা ও রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ এসে এসব ককটেল নিক্ষেপ করছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর দুর্বল হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। পাশাপাশি নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে কিছু রাজনৈতিক দলের। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা করছেন গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণসহ নানামুখী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

তবে ককটেল বিস্ফোরণ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, যে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো আমাদের নজরে রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। অপরাধীরা চিহ্নিত হলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।