
৪৪তম বিসিএস-এ চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর প্রায় ৫০০টি পদে পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই সংখ্যক সুপারিশপ্রাপ্ত আগের বিসিএসে একই পদ বা অন্য পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরি করছেন। একই পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ক্ষোভ থেকে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলনও করছেন। তারা মানববন্ধনেরও উদ্যোগ নিয়েছেন। বিষয়টি সামনে আসায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে পরবর্তী বিসিএস’র জন্য। তবে ৪৪তমদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে পিএসসি সূত্র জানিয়েছে।
গত ৩০শে জুন ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। ১ হাজার ৭১০টি পদ থাকলেও ১ হাজার ৬৯০টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বাকি ২০টি কারিগরি বা পেশাগত পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় সুপারিশ করতে পারেনি পিএসসি। এতে সবচেয়ে বেশি ৭৭৬টি পদ ছিল সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০, পুলিশে ৫০, পররাষ্ট্রে ১০, আনসারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭ জন নিয়োগের কথা ছিল। তাদের মধ্যে ৪৫২ জনের তথ্যসহ প্রায় ৫০০ জনের পুনরাবৃত্তি হয়েছে বলে জানা যায়।
পুনরাবৃত্তি হওয়া প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের শ্রম, সময়ের অপচয় হলো। মশিউর রহমান সবুজ। তিনি পুনরায় লাইভস্টক ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমার সকল তথ্য পিএসসি’র কাছে আছে। তারপরও একই ক্যাডারে কেন দেয়া হলো এর কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।
মো. শাহদুজ্জামান ৪৩তম বিসিএস’এ সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই ৪৪তম বিসিএস’র আবেদন করেন। তিনি বলেন, আমি শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি পরবর্তী কর্মদিবসে আমি প্রত্যাহার করে আসবো। আমার পুনরায় একই ক্যাডারে আসায় আমার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম বৃথা গেল। একটা সিস্টেমে আসা দরকার পিএসসি’র। তারা সুপারিশ করার আগে তথ্য সংগ্রহ কেন করলো না। আবার অনেকের তথ্য দেয়া ছিল সেটাও তারা বিশ্লেষণ করে নাই। তিনি আরও বলেন, এখন যে পদগুলো ফাঁকা থাকবে এই পদগুলো নন-ক্যাডারদের দেয়া যেতে পারে।
পুনরাবৃত্তির কারণে সুপারিশ পাওয়ারা যেমন অখুশি ঠিক তেমনি সুযোগ বঞ্চিতরাও। চাকরিপ্রার্থী সৌরভ রহমান বলেন, এখন এই ফলগুলো পুনর্বিবেচনা করা উচিত। শূন্য পদে নন-ক্যাডারদের যোগ্যতা ও ফল অনুযায়ী পদায়নের সুপারিশ করার দাবি জানাই। আমরাও যোগ্য। কিন্তু পদ সংকটের কারণে আমরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়নি।
এদিকে পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পিএসসি মৌখিক পরীক্ষার আগে প্রার্থীরা পুনরায় চয়েজ ফর্ম (পছন্দক্রম পরিবর্তন) পূরণের সুযোগ পাবেন। আগামী ৮ই জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা থেকে এ নিয়ম চালু করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৮ই জুলাই অনুষ্ঠেয় ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে একটি ‘ক্যাডার পছন্দক্রম পরিবর্তন ফর্ম’ পূরণ করে জমা দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর আগে প্রত্যেক প্রার্থীকে ওই ফর্ম সরবরাহ করা হবে এবং প্রার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে ফর্মটি পূরণ করে সাক্ষাৎকার বোর্ডে জমা দিতে হবে। এতে আরও বলা হয়, প্রার্থী আবেদনের সময় যে পছন্দক্রম দিয়েছিলেন, তা বহাল রাখতে পারবেন কিংবা চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন।
বিসিএস’র মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি ফেসবুক গ্রুপের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একই ক্যাডারে পুনরাবৃত্তিতে প্রায় ৫০০ জনের নাম এসেছে। সেখানে অন্তত ৪৫২ জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। নিজের পরিচয় গোপন রেখে দেয়া একটি পোস্টে বলা হয়, পিএসসি সংস্কার এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। ৫ই আগস্টের পরও এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে না। আমাদের ১০ দাবিতে চলমান আন্দোলন বেগবান করতে হবে।
৪৪তম বিসিএস নিয়ে অসন্তোষ নতুন নয়। ৪৪তম বিসিএস’র ফল পুনর্বিবেচনাসহ ১০ দাবিতে আন্দোলন করছেন। গত শুক্রবার তারা শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলন করেন। এ সময় তারা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ এনে এই ফল পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম মতিউর রহমান বলেন, ৪৪তমদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নাই। আইনগতভাবে তাদের সুপারিশবঞ্চিত করার সুযোগ নাই। যাদের সুপারিশ করা হয়েছে তারা আইনগত অধিকার থেকে পেয়েছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এজন্য ৪৫তম থেকে চয়েজ ফর্ম সংশোধনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ বা চাওয়া না জানানোয় পুনরাবৃত্তির বিষয়টি আমরা অফিসিয়ালি জানতেও পারি নাই। তার কারণে বিধি অনুসারে ফল প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪৪তমদের বিষয়ে কোনো আলোচনা কমিশনে হয়নি। যেহেতু বিষয়টি আমাদের সামনে এসেছে এই বিষয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হলেও হতে পারে।