
প্রত্যাশা রইল প্রত্যাশাতেই। ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। বছরখানেক ধরে দুদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে চলা প্রকল্পগুলো আদৌ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একদিকে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ, অন্যদিকে এলওসি’র প্রকল্প। ইতোমধ্যে এলওসি’র তিনটি প্রকল্প বাতিলও করা হয়েছে। তাছাড়া যে প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান ছিল-সেগুলোর কাজ তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত নিজেদের ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছিল ভারত। ভারত ‘ট্রানজিট করিডর’ উন্নয়নের অংশ হিসাবে বগুড়া-সিরাজগঞ্জে নতুন রেলপথ নির্মাণ, খুলনা-দর্শনায় ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ ও পার্বতীপুর-কাউনিয়ার মিটার গেজ রেল ডুয়াল গেজে রূপান্তর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রকল্প তিনটি থেকে সরে দাঁড়ায় ভারত। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকল্প তিনটিতে অর্থায়নে অনাগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। তিন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। রোববার এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) দপ্তর সূত্র জানায়, ‘এলওসির এ তিনটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে। বাতিল তিনটি প্রকল্পের মধ্যে শুধু বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রকল্পটি অন্যত্র-বিকল্প অর্থায়নের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রোববার সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যুগান্তরকে বলেন, এলওসির সব প্রকল্প নিয়ে আমরা ভাবছি। রেলে এলওসি’র যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলোতেও ধীরগতি রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। এখানে ভারতের স্বার্থেই ভারত এমনটা করেছে। তারাই তিন প্রকল্প থেকে সরে যেতে চেয়েছে। যেহেতু তারা সরে যেতে যাচ্ছে-এ নিয়ে আমরা কোনো দ্বিমত পোষণ করিনি। এখন আমাদের প্রয়োজনে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করব।
বাতিল তিন প্রকল্পের বাইরেও রেলে ভারতীয় ঋণে আরও তিনটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা-টঙ্গী ৩য় ও ৪র্থ লেন। এ প্রকল্পটি ২০১১ সালের দিকে শুরু হলেও প্রায় ১৪ বছরেও পুরো প্রকল্প সমাপ্ত হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৫ থেকে ৭ মিনিট পরপর ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হতো-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীরা। এ প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় বিশেষ করে টঙ্গী এলাকায়-রেলের দুই অঞ্চল পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ট্রেন আটকা পড়ে। অথচ নির্মাণ শুরুর আড়াই বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। জানা যায়, ভারতের সঙ্গে এলওসি’র প্রথম চুক্তি হয় ২০১০ সালে। ঋণের অর্থমূল্য ধরা হয় ৮৬ কোটি ডলার। দ্বিতীয় এলওসি চুক্তি হয় ২০১৬ সালে। এতে অর্থমূল্য ধরা হয় ২০০ কোটি ডলার। তৃতীয় এলওসির চুক্তি হয় ২০১৭ সালে। অর্থমূল্য ধরা হয় ৪৫০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মোট প্রস্তাবিত ঋণের পরিমাণ ৭৩৬ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত এসব ঋণ চুক্তির আওতায় অর্থছাড় হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলারের মতো। রেলের ক্ষেত্রে চুক্তি ছিল, কাজের ৭৫ শতাংশ জনবল, পণ্য ও সেবা দেবে ভারত।
রেলওয়ে অবকাঠামো দপ্তর সূত্র বলছে, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডাবল লাইন প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় আনুমানিক ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি ৫৫ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবনায় ব্যয় বাড়িয়ে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৮০ কোটি টাকা করা হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২ হাজার ২৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, উল্লেখিত তিনটি প্রকল্প বাতিল হয়েছে। এলওসি’র অর্থায়নে প্রকল্প তিনটির প্রাথমিক সমীক্ষাসহ যাবতীয় কাজে অর্থও খরচ হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। যদিও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া যে আশায় প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছিল-তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিশ্চয় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বিকল্প অর্থায়নের নির্দেশনা পেয়েছি। এলওসি’র চলমান প্রকল্পগুলোতেও ধীরগতি চলছে। ঢাকা-টঙ্গী ৩য় এবং ৪র্থ লেন প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রকল্পটিসহ চলমান প্রকল্পগুলো দ্রততার (নির্ধারিত সময়) সঙ্গে সমাপ্ত করতে হবে।