Image description

চ্যালেঞ্জের মুখে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। গতকাল বিকালে যখন মানবজমিনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন তখন আরিফুল হক প্রসঙ্গ উঠতেই বললেন- ‘এটা তার ব্যাপার। তিনি কী করছেন বা করবেন সেটি তিনি জানেন। আমার জানার কথা নয়।’ তবে পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়টি তিনি আমলে নিয়েছেন।

বলেছেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে সব সময়ই আলোচনা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কখনোই আলোচনা বন্ধ হয়নি।’ সিলেটের পরিবহন শ্রমিকদের তোপের মুখে এখন জেলা প্রশাসক মাহবুব মুরাদ। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বুধবার সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে ডিসি মুরাদকে প্রত্যাহারের দাবিতে দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম। গতকাল জানালেন, আন্দোলনে অটল তারা। এখন ৫ দফা দাবি  দেয়া হয়েছে। পরে একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে পারেন তারা। দুপুরে মানবজমিনকে ময়নুল জানান, ‘৪ঠা জুলাই অর্থাৎ আজকের মধ্যে যদি সিলেট থেকে ডিসিকে প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে শনিবার থেকে সিলেট জেলায় সকল পণ্যবাহী ট্রাক পরিবহনে ধর্মঘট পালন করা হবে। আর সোমবার থেকে জেলার সব পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাবেন।’ তিনি বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়, তাই করতে হবে। নতুবা সিলেটের  জেলা প্রশাসক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংকট দিন দিন তীব্র করবেন।’

ডিসি’র বিরুদ্ধে কেন ক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা- এ প্রশ্নের জবাবে সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিকদের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- ডিসি’র অনেক কর্মকাণ্ডই বিতর্কিত। তিনি একদিকে যেমন লুটপাটকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন অন্যদিকে আইনপ্রয়োগের নামে সাধারণ জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছেন। তারা বলেন, সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তেই লিজ দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু লুটপাট করা পাথরপণ্য পরিবহন করতে গেলে শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এলসি’র পাথর ভাঙার জন্য গড়ে ওঠা স্টোন ক্রাশার মিল ভেঙে ফেলা ছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। এতে বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন। পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার জন্য ঐক্য পরিষদের ব্যানারে পরিবহন শ্রমিক ও পাথর ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে থাকলেও ডিসি’র পক্ষ থেকে কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ৫ দফা দাবিতে যে কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে সেটি শুক্রবার থেকে সিলেটে পালন করা শুরু হবে। এতে পরিবহন শ্রমিকদের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ থাকবে। পরিবহন শ্রমিকদের এই ক্ষোভের মধ্যে সিলেটের জেলা প্রশাসকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ডিসি’র নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি আগেই থেকেই ক্ষুব্ধ। এজন্য ডিসিকে এড়িয়ে চলছিলেন তিনি।

গত পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি’র নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। এ নিয়ে ওই সময় আরিফসহ জেলা ও নগর বিএনপি’র নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। পরবর্তীতেও জেলা প্রশাসক সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতামত উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে কিছু কাজ করেছে। আর এই কাজগুলোর কারণে নানা বিতর্ক দেখা দেয় সিলেটে। মেজর টিলা ইসলামপুরে জালালাবাদ চক্ষু হাসপাতালের লিজ দেয়া মার্কেট হঠাৎ করে ডিসি’র নির্দেশে ভাঙা শুরু হয়। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েন বিএনপি নেতারা। মঙ্গলবার মার্কেট ভাঙাকালেই বিএনপি নেতারা ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক বক্তব্যে সায় দেন। বিষয়টি সময় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে করার কথা বলেন বিএনপি নেতারা। পরে  জেলা প্রশাসক অবশ্য এ ব্যাপারে নমনীয় হয়েছেন। কিন্তু তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। ওই দিনই নিজ বাসাতে প্রেস ব্রিফিং করে আরিফুল হক জেলা প্রশাসকের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। তার স্পষ্ট কথা; ওই ভূমি ব্যবসায়ীদের লিজ দিয়েছিলেন তার পূর্বেকার ডিসি। কিন্তু তিনি কোনো আলোচনা না করেই হঠাৎ করে মার্কেট ভাঙা শুরু করেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ডিসি’র এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বুধবার পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচিতে গিয়ে সংহতি প্রকাশ করে ডিসি’র অপসারণের দেয়া আল্টিমেটামে একাত্মতা প্রকাশ করেন। আরিফুল হক চৌধুরী এ ব্যাপারে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমাদের দাবি স্পষ্ট ডিসি আইনের দোহাই দিয়ে অমানবিকতা করছেন। যেটি সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টিকটূ হচ্ছে। তার কারণে সিলেটের নানা সেক্টরে আজ অস্থিরতা। সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুধীজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সভার আয়োজন করেছিলেন। সেখানেও সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো সিলেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবগত করা হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের কর্মসূচিতে একাত্ম হয়েই আমরা ডিসি’র কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো। সেটি অন্য কোনো কারণে নয়, কেবল সিলেটবাসীর স্বার্থ বিবেচনা করে আমরা সেটি করবো।’ এদিকে- জেলা প্রশাসকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। গোয়াইনঘাটে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে রীতিমতো বালু লুটের মহোৎসব চলছে। এ নিয়ে লেঙুরা ইউনিয়নের লোকজন অবৈধ রয়্যালিটির প্রতিবাদে প্রায় ৫শ’ নৌকা আটকে রেখেছেন। সেনাসদস্যরা মাঠের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করলেও জেলা প্রশাসন অবৈধ বালু জব্দ করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন। এ নিয়ে গোয়াইনঘাটেও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা।