Image description

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ৬৫ জন চিকিৎসক নিয়োগকে ‘রাতের ভোট’ আখ্যা দিয়েছেন বঞ্চিত ও সাধারণ চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়ন, মেধাক্রম অনুযায়ী ফল প্রকাশ ও প্রজ্ঞাপন- কোনোটিই হয়নি, অথচ এত মানুষ নিয়োগ পেলেন কীভাবে!

 

চলতি বছরের ১২ ও ১৩ এপ্রিল হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের ২২ ও ২৩তম সভার পর ৩০ জুনের মধ্যে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদেই এ সংবাদ সম্মেলন।  

এ সময় চিকিৎসকরা বলেন, কোনো বিশেষ অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ (অ্যাডহক ভিত্তিতে) হতে পারে। তবে সরকারি হাসপাতাল বা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে এমন নিয়োগ দেওয়া যায় না। কোনো ধরনের সার্কুলার বা নিয়োগ পরীক্ষার তোয়াক্কা না করে লোকচক্ষুর অন্তরালে এ নিয়োগ হয়েছে। এখানে যতজন আবেদন করেছেন, ততজনেরই নিয়োগ হয়েছে। তাও হয়েছে অন্ধকারে।

নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেদের বৈধ দাবি করছেন, আপনারা কেন বিরোধিতা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বঞ্চিত চিকিৎসকরা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এমন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) নিয়োগকে বৈধ বলেছে, বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তরাও সে রকমই বৈধ দাবি করছেন। আমাদের দায়িত্ব এই অনিয়মের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরা। এমন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নিয়োগ কেন হবে? যেখানে সুযোগ আছে সার্কুলার দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া। সেটাই করতে হবে।’

যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে কিনা, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা বলেন, ‘টেবিলের নিচে লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই যোগ্যতার প্রশ্ন ওঠে। তারা যোগ্য হলে লড়াই করে এই পদে আসতেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফার্টিলিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এসএম খালিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই পরিচালক প্রশাসনকে দায়ী করছি, নিয়োগ বোর্ডের যারা সাইন (স্বাক্ষর) করেছেন তাদের দায়ী করছি। আমরা আবারও বলছি, এই হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে (হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. এমএম আজিজ) জাতির সামনে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে; অসম্মানিত, লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আমরা এই প্রশাসনের শ্রদ্ধেয় স্যারদের অতীব বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আপনারা এগুলো দেখে শিক্ষা নিন। জাতির কাছে, চিকিৎসক-ছাত্রদের কাছে শ্রদ্ধার আসনে থাকার চেষ্টা করেন। কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করে বা কোনো পক্ষে গিয়ে অসম্মানের ভাগীদার বা ভবিষ্যতে একটা কালো অধ্যায়ের সাক্ষী না হওয়ার অনুরোধ করব।’

এ নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন ডা. এসএম খালিদুজ্জামান। বলেন, ‘আমরা চাই, এই নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আবার নিয়োগ দেওয়া হোক। মেধার ভিত্তিতে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’

এ সময় চিকিৎসকরা স্লোগান তোলেন, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘নব্য ফ্যাসিস্টদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’ তারা বলেন, ‘কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ৬৫ জন নিয়োগ হয়েছে, যা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের মতো এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এভাবে স্বচ্ছতা ছাড়া নিয়োগ কোনোভাবে কাম্য নয়। আমরা আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুরোধ করব, যাতে চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়।’ 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘রাতের ভোট’ বলে আখ্যা দিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। ওই নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল।