Image description

দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চালু থাকা লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া ও অবকাঠামো খাত বদলে ফেলার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা’ এর খসড়া প্রণয়ন ও পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে টেলিকম শিল্পের ভ্যালু চেইনে থাকা অনেক দেশি প্রতিষ্ঠানকে। আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানকারী ২৩টি আইজিডব্লিউ এবং আন্তঃঅপারেটর সংযোগ সেবাদানকারী ২৪টি আইসিএক্স কোম্পানিকে বিলুপ্ত করতে চায় সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার টেলিকম ও আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, যেহেতু আমাদের এখানে রাষ্ট্রের রাজস্ব চুরি করার একটা ঝোঁক আছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বা সিডিআর ডিলিট করে দেয়ার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই ঘটনাগুলোকে আমলে নিয়ে আমরা চাচ্ছি যে বর্তমানে সাত বা আট স্তরের যে লাইসেল্স আছে, এটাকে সরল করে মাত্র দুই বা তিন স্তরে নিয়ে আসার জন্য।

এদিকে, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) তাদের আয়ের ৫০ শতাংশ বিটিআরসিকে পরিশোধ করে। অন্যদিকে, মোবাইল অপারেটর পরিশোধ করে মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। বর্তমানে আইসিএক্স খাত থেকে সরকার প্রতিবছর ৩শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।

প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে আইসিএক্স বিলুপ্তির পর এই আয় স্থানান্তরিত হয়ে মোবাইল অপারেটরদের পকেটে যাবে। বিপরীতে রাষ্ট্র পাবে মাত্র ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছেটে ফেলা হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ওপর।

আইসিএক্স অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান বললেন, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে আমাদের দেশীয় সম্পদ তুলে দেয়ার জন্য বিটিআরসি যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে তার ফলে কী হবে? আমাদের যারা দেশীয় উদ্যোক্তা রয়েছেন, দেশীয় প্রকৌশলী যারা আছেন, সম্পদ যা আছে সেটা চলে যাবে।

একইভাবে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনা খাতের আয়ের রাজস্বেও হোঁচট খাবে বাংলাদেশ। বর্তমানে আইজিডব্লিউ থেকে সরকার সরাসরি রাজস্ব পায় শত কোটি টাকার বেশি। স্থানীয় ২৩টি আইজিডব্লিউ বাতিল করা হলে কোনও সুফল পাবে না গ্রাহক। বরং শত কোটি টাকার রাজস্ব বিলীন হবে বিদেশি অপারেটদের ঘরে।

আইজিডব্লিউ অপারেটস ফোরামের সভাপতি আসিফ সিরাজ রব্বানী বলেছেন, এমন কোনও নেটওয়ার্ক টপোলজিতে যাওয়া ঠিক হবে না যেখানে কেবল স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়। এখানে কিন্তু অনেক বড় একটি কর্মসংস্থান হয়ে আছে। নেটওয়ার্ক টপলজি নতুনভাবে বা নতুন আইলেস পলিসি রিভাইস করে বা যেভাবেই ডেভেলপ করুক এখানে যেন দেশীয় কোম্পানির যে স্টেকটা সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়। এমন যেন না হয় যে সবকিছু বিদেশি কোম্পানির হাতে চলে যায়।

বিটিআরসির সরক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ খাতে, রাজস্বের ধারা অক্ষত রাখার দাবি প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারীর।

ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবে বলেন, সরকারের রাজস্ব অক্ষত করে যদি দাম কমানোর বিষয়টি সফল করতে হয় আমাকে স্তর কমাতে হবে। এটা ছাড়া কোনও বিকল্প নাই। নতুন যে লাইসেন্সিং এখানে আমি মনে করি যে কারোই ব্যবসা হারানো কোনও ঝুঁকি নাই। বরং তাকে নতুন বিনিয়োগে বাধ্য করবো আমরা।

আইএলডিটিএস পলিসির আওতায়, আইজিডব্লিউ ও আইসিএক্স অপারেটরদের ২০২৭ সাল পর্যন্ত সেবা পরিচালনার লাইসেন্স দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।