Image description

মেয়েটার বয়স ৫ বছর চলছে, সে এখনো জানে না তার বাবা কোথায়। স্কুলে ভর্তি করিয়েছি অনেকের বাবা যখন স্কুল থেকে তাদের সন্তানদের নিতে আসে তা দেখে বাড়ি এসে কান্নাকাটি করে আর বলে ‘মা আমার বাবা কোথায়, বাবা আমাকে কেন স্কুল থেকে নিতে আসে না’। আমি বলেছি মা- তোমার বাবা বেড়াতে গেছে এসব বলে বলে আর কতদিন সান্ত্বনা দেব?

জুলাই তো ঠিকই আসছে, কিন্তু আমার স্বামী তো আসল না। আমি না পেলাম স্বামীকে, না পেলাম স্বামীর হত্যার বিচার! আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। ছেলেটা এখন বাবা বাবা বলে ডাকে। আমি কি করে এই শোক ভুলব।

বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় গত বছরের ৪ আগস্টে কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার কালের কণ্ঠকে এসব কথা বলেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হ্যাপী আক্তার আরো বলেন, আমার স্বামী বাস চালাতেন, তার তো কোনো শত্রু ছিল না, তাকে গুলি করছে আবার কুপিয়ে মাথা আলাদা করে ফেলেছে, শুধু গুলি করলেও আমার স্বামী বাঁচত।

তাকে যে যেভাবে পারছে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করছে। একবারও মায়া লাগেনি তাদের।

শহীদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমার স্বামীকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে তারা জামিনে বের হয়ে আবার প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে পুলিশ আসামি ধরছে কিন্তু বিচারক তাদের জামিন দিচ্ছে কেন? তাহলে কি আমি কোনোদিনও স্বামী হত্যার বিচার পাব না?

হ্যাপী আক্তার বলেন, আমার স্বামী যখন মারা যায় তখন আমার শূন্য হাত ছিল, থানা থেকে তার লাশ বাড়িতে আনব সে টাকাটাও ছিল না।  আমার স্বামী মারা যাওয়ার এক মাস পর আমার একটি ছেলে সন্তান হয়।

আজ ছেলেটা বাবা বাবা (অস্পষ্ট) বলে ডাকে। সে যদি বড় হয়ে তার বাবাকে খুঁজে আমি কি জবাব দেব? সরকার যেটুকু সাহায্য করেছে তা দিয়ে চলতেছি, বাচ্চার ওষুধ, সংসারের খরচ চলে।

শহীদ রুবেলের মা হোসেনেরা বেগম বিলাপ করতে করতে কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার একটাই বুকের ধন কাইড়া নিল, আমার সংসারটা সে আগলাইয়া রাখত, চার বোনের পর আমার এ পোলা হইছে। ছোট বেলায় তার বাপ মারা যায়, আমি কষ্ট করে পুত পালছি কি মাইনষে গুলি কইরা ও পিডাইয়া মারত! আহারে আমার মানিক চানের দম যেন কেমনে বের হইছে গেছে? এক বছর হইয়া গেল আমার মানিক চান আমারে মা কইয়া ডাক দেয় না। রাস্তা ঘাটে কত মানুষ দেখি আমার রুবেলরে দেখি না।

আন্দোলনের সময় মানুষ বলাবলি করছিল কারা যেন রুবেল নামে একজনকে গুলি কইরা মারছে আমার কানে যখন এ খবর আইছে আমি ভাবছিলাম অন্য কোনো রুবেল হবে। কিন্তু এই রুবেল যে আমার রুবেল আমি তো বুজি নাই বাবা। মারা যাওয়ার দিন দুপুর বেলা আমাকে ফোন করে বলে আমি ভাত খাব হ্যাপীরে কও ভাত বাড়তে, আমি তো পুতের লাইগ্যা ভাত রাইনধা বসে ছিলাম পুত আইব এক সঙ্গে ভাত খাব। কিন্তু পুত তো আইল, লাশ হইয়া আইল।   

বুধবার রাতে শহীদ রুবেল প্রসঙ্গে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, শহীদ রুবেল হত্যার বিচার নিয়ে আমরা হতাশ। তাকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করল সে সকল সন্ত্রাসীরা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাচ্ছে। শহীদ রুবেল কোন দল করে তা দেখার বিষয় না তাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। জুলাই আন্দোলনের এক বছর চলছে কিন্তু দৃশ্যমান কোনো বিচার হয়নি। আমরা সরকারের কাছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার দাবি করছি।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ওই সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি, পরে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।