
Ali Ahmad Mabrur( আলী আহমেদ মাবরুর)
ঘুমটা আল্লাহর বড়ো নেয়ামত। কেউ কেউ আছে যারা বিছানায় শরীরটা লাগানোর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে যান। তারা সৌভাগ্যবান। আবার কেউ কেউ কত চেষ্টা করেন। তারপরও নির্ঘুম রাত পার করেন। ঘুমের ঔষধ খান, বই পড়েন, এপাশ ওপাশ করেন, কিন্তু ঘুমাতে পারেন না। আর আরেক শ্রেনীর মানুষ আছে, যারা অগাধ সম্পদের মালিক। সম্পদের সুরক্ষা আর নতুন সম্পদ গড়ার মোহ তাদেরকে ঘুমুতে দেয় না।
আমি জানি না, তবে প্রশ্ন জাগে- মৃত্যুর অপেক্ষার চেয়ে বড়ো কোনো টেনশন আছে কি? যারা মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বা আছেন- তারা কীভাবে ঘুমাতে পারেন? মরতে তো সবাইকে হবেই। ঐ মরনের কথা বলছি না। কিন্তু ধরুন, আপনাকে একটু পর মেরে ফেলা হবে কিংবা যে কোনো দিন আপনাকে মেরে ফেলা হবে- এই ভয়াবহ তথ্য যার জানা আছে তার কেমন অনুভূতি হয়? তিনি কি আদৌ ঘুমুতে পারেন?
আমার মনে আছে, আব্বার সাথে আমরা ফাঁসি কার্যকর করার আগে শেষ সাক্ষাতের জন্য যখন যাই, তখন তিনি বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন। শেষ সাক্ষাতের ওপর আমার লেখাতেও আমি বিষয়টি তুলেছিলাম। তাকে ডাকাডাকি করেও তোলা যাচ্ছিল না। নাতিরা ডাকলো। আমরা সন্তানেরা ডাকলাম। আব্বা প্রথম কয়েকবার টেরই পেলেন না। অথচ একটু পর তার ফাঁসি হওয়ার কথা।
গতকাল আজহার চাচাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, চাচা মুক্ত জীবনে ঘুমাতে পেরেছেন? আমাকে উনি বললেন, শোন বাবা, আমার ঘুমে কোনোদিনই সমস্যা হয়নি। আমি বাসাতেও ভালো ঘুমিয়েছি। হাসপাতালে যে কয়েকমাস থাকলাম, সেখানেও ভালোভাবে ঘুমিয়েছি। আবার সাড়ে ৭ বছর যে কনডেম সেলে থাকলাম, সেখানেও ভালো ঘুমিয়েছি।
আমি তার কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, শুনো, আমি তো ফাঁসির জন্য বহু বছর ধরেই প্রস্তুত। তুমি যখন নিজের সব কিছু আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিতে পারবা, তখন তুমি ঘুমুতে পারবা, ভালো থাকতে পারবা। তিনি আরো বললেন, জেলখানা ভালো থাকার জায়গা নয়, কনডেম সেল তো নয়ই। তুমি নিজে যদি নিজেকে মোটিভেট করতে না পারো- তাহলে সেখানে ভালো থাকা অসম্ভব।
আজহার চাচা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পেরেছিলেন। নিজেকে মোটিভেটেড অবস্থায়ও রাখতে পেরেছিলেন। নাহলে এতটা স্ট্রং থাকা এবং চেহারাও অনেকটা ধরে রাখা অসম্ভব। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। বয়সের একটি প্রভাব তো পড়বেই, ওটা ছাড়া বাহ্যিকভাবে তার ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে তা দেখাই যায় না। কিছুটা শুকিয়ে গেছেন, গলার স্বর একটু নীচু হয়েছে- এগুলো বয়সের কারণে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বাকি বিষয়গুলো, ইনফ্যাক্ট এত বছর আগে ফাঁসির রায় হওয়ার পরও তা কার্যকর না হওয়াই আমার কাছে বিরাট বড়ো মিরাকল মনে হয়।