
ঢাকা ওয়াসায় আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছে সংস্থাটি। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের আমলেও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তথা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার জনবল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ওয়াসায় কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, সমন্বয়কদের বিতর্কিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি মহল ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া ১৫০ জনের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটিও সঠিক নয়। লোক নিয়োগ হয়েছে ১০৮ জন। সুপারিশ যদি থাকে, সেখানে কেন শুধু সমন্বয়কদের নাম প্রকাশ করা হলো। অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তাদের সুপারিশও ছিল, সেগুলো কেন প্রকাশ করা হয়নি, প্রশ্ন এই কর্মকর্তার।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেশন এবং প্রকল্পসমূহে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের একটি নীতিমালা আছে। সেখানে কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দিতে পারবে। এখানে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত রেজিস্ট্রার্ড প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োজিত আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান। সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান চাহিদামতো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের কাছে জনবল চাইলে সেই প্রতিষ্ঠান জনবল নিয়োগ দেয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো পছন্দ-অপছন্দ থাকা বাধ্যতামূলক নয়। সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানে তার বিজ্ঞপ্তিতে শুধু পদ এবং
যোগ্যতা উল্লেখ করে তৃতীয় পক্ষকে জানাবে। ঢাকা ওয়াসার আউটসোর্সিং নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। সেখানে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কিছু জনবল নিয়োগ হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা না হলেও প্রতিষ্ঠানটিকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে জানায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ করা হয়। ঢাকা ওয়াসাতেও মেশিন অপারেটর, বিলিং সহকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, চালক, সিকিউরিটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু ঢাকা ওয়াসায় নয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের নজির রয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও একই নীতিমালার অধীনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ওয়াসা আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নয়। তৃতীয় পক্ষের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ দেয়। ফলে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ নিয়ে ওয়াসাকে ঘিরে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও অধিদপ্তরে যে বিধিমালার আওতায় আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ হয়, এখানেও তাই করা হয়েছে। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসায় বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ আউটসোর্সিং জনবল রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এমডির পছন্দ অনুযায়ী অনেক লোকবল নিয়োগ হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সাবেক এমডি কোথায় আছেন তার সঠিক জবাব ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে নাই। তা ছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়নি।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি পক্ষ সমন্বয়কদের বিতর্কিত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সমন্বয়কদের’ সুপারিশে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগসংক্রান্ত খবর প্রকাশ করা হয়েছে। সুপারিশের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের নাম এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে শুধু সমন্বয়কদের নাম তুলে ধরা হয়েছে বলে সূত্র বলছে।
আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগসংক্রান্ত প্রকাশিত খবরের ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসা নয়। তবে আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের জন্য ওপেন টেন্ডারিং পদ্ধতিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় এবং নিয়োগকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল সরবরাহ করে থাকে।
আরও বলা হয়, এ ক্ষেত্রে সরকারের আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ঢাকা ওয়াসা আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিয়োগপত্র দেয় না। আলোচ্য প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার এমডি, ডিএমডি, সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পিএস ও এপিএস, ছাত্র সমন্বয়ক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সুপারিশের কথা উল্লেখ করে যে তালিকা দেখানো হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানায় ঢাকা ওয়াসা।