Image description

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। সে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের বিদেশে অবস্থান করার ছবি ও ভিডিও প্রায় সামাজিক মাধ্যমে আসে। কিন্তু বিদেশে থাকার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবারসহ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। 

দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আট মাসের মাথায় তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট বা আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারতে থাকার ভিডিও দেখা যায়। এরপরও গত ১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী সন্তানসহ তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের দুবাইয়ে থাকার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরও দুদক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি স্ত্রী-সন্তানসহ শামীম ওসমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

দেশ ছাড়ার পরও কেন দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা

দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পারেন, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছাড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রের কাছে ডকুমেন্টারি কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। দুর্নীতি অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যাতে করে, দেশে আসলে আর কেউ ফেরত যেতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত দেড় থেকে দু'শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। তাদের অধিকাংশেই দেশের বাহিরে অবস্থান করছে বলে আমি শুনেছি। তবে রাষ্ট্রের কাছে প্রমাণিত না হওয়ায় ধরে নিবেন তারা দেশের মধ্যে অবস্থান করছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে যে কোনও সময়ে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন। 

সংশ্লিষ্ট আদালতের দুদক জিআরও শাখার কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে কেউও রাজি হননি।

এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা  মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, বিদেশে থাকার পরও কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি। সেজন্য কখনও কারণও জানা হয়নি। 

তবে দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা আসামির বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কারণ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কোনও প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে, এমন কোনও প্রশ্ন যাতে না ওঠে। সেসব দিন বিবেচনা করেই দেশের বাইরে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।'