
রাজধানীতে অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। নগরীতে পরিবহনের তুলনায় সড়ক রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। যেখানে নগর পরিবহন চলাচলে হিমশিম খেতে হয়। বিপরীতে এই স্বল্প পরিমাণ সড়ক অবৈধভাবে ব্যবহার করে চলছে দেশের আন্তজেলার বাসগুলো। দিনরাত সমানতালে এসব বাস সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এসব বাসের কাউন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে। ঢাকার যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য এসব কাউন্টার অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার মোট আয়তনের মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সড়ক। এর মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ রাস্তা গণপরিবহনের জন্য উপযুক্ত। সেখানেও অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন। এক কথায় রাজধানীতে চলছে অনুমোদনহীন বাসের দৌরাত্ম্য। বিআরটিএ এবং পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে স্বল্প পরিমাণ সড়ক অবৈধভাবে ব্যবহার করে চলছে দেশের বিভিন্ন জেলার বাস। দিনরাত সমানতালে এসব বাস সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক, মিরপুর সড়ক, পান্থপথ সড়ক, কলাবাগানসহ রাজধানীর প্রতিটি সড়কে দিন ও রাতে সমানতালে চলাচল করছে বিভিন্ন আন্তজেলা বাস। এর মধ্যে রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে চলাচল করছে স্টার লাইন, ইকোনো, আল বারাকা, হিমাচল, হিমালয়, লাল সবুজসহ অনেকগুলো আন্তজেলা বাস।
যেগুলো চলাচল করছে ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত। একই রোডে চলাচল করছে চাঁদপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আল আরাফাহ সার্ভিস। হামদান বাস খুলনা থেকে এই রুটে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে। একই রুটে শেরপুর থেকে সাদিয়া বাস, চট্টগ্রাম থেকে টঙ্গী সোহাগ পরিবহনের বাস চলাচল করছে। এই রুটে চলাচলকারী আন্তজেলা বাসগুলোর ১০-১২টি পয়েন্টে কাউন্টার রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রাবাদ, আসাদগেট, মালিবাগ, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, এয়ারপোর্ট এলাকায় দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর টিকিট কাউন্টার আছে। এসব কাউন্টারের সামনে দিন ও রাতের বেলা নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস এসে থামায়। চলে যাত্রী ও লাগেজ নামানো-তোলার কাজ। ফলে এসব সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টার্মিনালের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে আন্তজেলা বাস চলাচলের অনুমতি নেই। এসব বাসের রুট পারমিটও বিআরটিএ দেয়নি। অবৈধভাবে চলছে এসব আন্তজেলা বাসগুলো। এসব অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে মামলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার কথা পুলিশের। কিন্তু পুলিশের সামনে চলছে বাসগুলো। যেহেতু অবৈধ সে জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা নিচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা থেকে নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী হিমাচল, লাল সবুজ, একুশে পরিবহনসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী পরিবহন, যেসব অবৈধ রুটে চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) বরাবর চিঠি দিয়েছে বিআরটিএ। গত ১১ ফেব্রুয়ারি এই চিঠি দেয় বিআরটিএ।
এ বিষয়ে বিআরটিএর মুখপাত্র ও পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টার্মিনালের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে আন্তজেলা বাস চলাচলের অনুমতি নেই। এসব বাসের রুট পারমিটও বিআরটিএ দেয়নি। অবৈধভাবে চলছে আন্তজেলা বাসগুলো। এসব অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে মামলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার কথা পুলিশের। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটা আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোর কোথাও আন্তজেলা বাস শহরের ভিতরে প্রবেশ করে না। এসব বাসের টার্মিনালও থাকে শহরের বাইরে। তবে সেই টার্মিনাল ব্যবহার করা যাত্রীরা যেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পৌঁছতে পারে, সেজন্য রিং রোড, বাইপাস রোডের মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকার চিত্রটি ঠিক উল্টো। এখানে শহরের ভিতরেই তিনটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। আবার আন্তজেলা বাসের একটা বড় অংশই পরিচালিত হয় টার্মিনালের বাইরে বিভিন্ন সড়কের ধার থেকে। এগুলো যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা দুটোই বাড়িয়ে দিচ্ছে।