Image description

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। দোহার, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শনাক্ত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন—বড় ধরনের ভূকম্পনের মুখোমুখি হতে পারে এ অঞ্চল। তাদের মতে, শীতলক্ষ্যা বেসিন বা অববাহিকায় থাকা শিল্পাঞ্চল, আবাসন ও অবকাঠামো মূলত জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। এ ধরনের ভূমি ধসের উচ্চঝুঁকিতে থাকে। ভূমিকম্প হলে শুধু ঢাকার ভেতরের মেগা প্রকল্পই নয়, শীতলক্ষ্যার তীরে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার কারখানা, বেসরকারি শিল্প-কারখানা ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসনগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। একটি মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনও এ অঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল রাজধানীর অদূরে নরসিংদীর মাধবদী। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) অবশ্য বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে শতাধিক ও ঢাকায় অনেক ভবনে ফাটল তৈরি হয়েছে। হেলেও পড়েছে কয়েকটি ভবন। ঘরবাড়ির দেয়াল ও ছাদের রেলিং ধসে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।

ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সীমানার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ২ বা তার বেশি মাত্রার প্রায় ১০০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে আটটি ছিল ৪ মাত্রার বেশি এবং ৩ থেকে ৪ মাত্রার মধ্যে ছিল ৪৪টি। বাংলাদেশের ইতিহাসে নথিবদ্ধ হওয়া ১৭৬২ সালের আরাকান ভূমিকম্প সবচেয়ে শক্তিশালীগুলোর একটি, যার আনুমানিক মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৮। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ বদলে গিয়েছিল। ১৮৯৭ সালের ৮ দশমিক ৭ মাত্রার শিলং ভূমিকম্পেও সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বারবার হওয়া ভূমিকম্পে ভূতত্ত্ববিদরা বেশি চিন্তিত। তারা বলছেন, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বেল্টগুলো যে সক্রিয় হচ্ছে তারই প্রমাণ এগুলো। বড় ভূমিকম্প আসার আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, এটি তারই আগাম বার্তা।

দীর্ঘদিন ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত একশ থেকে দেড়শ বছর পরপর একটি অঞ্চলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ ও এর আশপাশের কাছাকাছি এলাকায় গত দেড়শ বছরে একটি বড় ও প্রায় পাঁচটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। তাই কাছাকাছি সময়ে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশের মধ্যে টেকটোনিক প্লেটের যে পাঁচটি সোর্স রয়েছে তার মধ্যে নোয়াখালী থেকে শুরু করে কক্সবাজার, নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং আরেকটি সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে”বলে জানান ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, ‘নোয়াখালী থেকে সিলেট—এ অংশে যে বড় ফাটল রয়েছে তারই একটি ছোট অংশ নরসিংদী। এর ফলে নরসিংদী এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়া অস্বাভাবিক নয়।’

মেহেদি আহমেদ আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বার বার বলে আসছি বড় ভূমিকম্প আমাদের দোরগোড়ায়। প্রতি ১০০-১৫০ বছর পর ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশে। এটাকে আমরা ভূমিকম্পের টাইম ফ্রেম বা সাইকেল বলি। বাংলাদেশ এখন সে সাইকেলে চলে এসেছে। এ ছোট ছোট কম্পন বড় ভূমিকম্পের প্রস্তুতি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার ভূমিকম্পের বিষয়টি গুরুত্বই দিচ্ছে না। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ফায়ার সার্ভিসও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাদের ভবনও ভেঙে পড়বে। রাস্তায় মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে পড়ে থাকবে। গাড়ি চলার সুযোগ থাকবে না। তাই সময় থাকতে রাষ্ট্র এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

শীতলক্ষ্যা বেসিন এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়। বর্তমানে এসব এলাকায় রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রজেক্ট—এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল রুট, পদ্মা-সংযোগ সড়ক, বিভিন্ন শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ অসংখ্য বড় অবকাঠামো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ নির্মাণ হয়েছে নরম মাটি ও নদীবিধৌত এলাকায়, যা ভূমিকম্পে দুলে ওঠার ঝুঁকি অনেক বেশি। আর শীতলক্ষ্যার দুই পাশজুড়ে রয়েছে বস্ত্র, ডায়িং, কেমিক্যাল, স্টিল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানাসহ শতাধিক ভারী শিল্প। ভূমিকম্পে এসব কারখানার জ্বালানি ট্যাংক, বয়লার বা কেমিক্যাল স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশগত বড় ধরনের বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। এছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ শ্রমিক আবাসনগুলোয়ও প্রাণহানির ঝুঁকি অনেক বেশি বলে তারা জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার পাড়ে শত শত মাঝারি ও ভারী শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা ছাড়াও রয়েছে অনেক আবাসন। বিশেষ করে জলসিঁড়ি আবাসন ও তার আশপাশে বেশকিছু সিটি রয়েছে, যেগুলোয় ৩০ তলা পর্যন্ত ভবনও হচ্ছে। এসব ভবনের পাইলিং যত ভালো করেই দেয়া হোক না কেন, এগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা এসব আবাসন করা হয়েছে জলাভূমি ভরাট করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের মতো ভূমিকম্প হতে থাকলে ঢাকার অভ্যন্তরের মেগা প্রকল্প ও জনবসতি তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, পাশাপাশি সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব এলাকার বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনও অনিরাপত্তায় রয়েছে।’

রাজধানী ঢাকার ওপর থেকে চাপ কমাতে গত এক দশকে ধীরে ধীরে শিল্প-কারখানাগুলো পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। বিশেষ করে গতকাল নরসিংদীর মাধবদীতে যে ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানেও দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাবসহ রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সার কারখানা। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানাও শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে। ভূমিকম্পের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে গেলেই এসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বিপর্যয়ের মাত্রা ভয়াবহ হবে বলে তারা মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, গত কয়েক দশকে ঢাকার সম্প্রসারণ হয়েছে দ্রুত ও অপরিকল্পিতভাবে। রাজধানীর পুরনো অংশটি গড়ে উঠেছিল মাটির শক্তিশালী গঠনের ওপর। কিন্তু গত কয়েক দশকে বর্ধিত হওয়া অংশে মাটির গঠন দুর্বল। এসব এলাকার বড় অংশই গড়ে উঠেছে মূলত ভরাট হওয়া জলাভূমির ওপর। তাই রিখটার স্কেলে ৭ বা এর চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বড় ধরনের প্রাণ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পে রাজধানীতে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও বিগত সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টিকে আমলেই নেননি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

একদিকে ঢাকায় ক্রমাগত আগুন ও ভূমিকম্প দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার ড্যাপ সংশোধন করে ঢাকায় বহুতল ভবন ও আরো মানুষ ঢোকানোর পথে হাঁটছে। এ পুরো প্রক্রিয়া জনগণের জানমালের নিরাপত্তার সঙ্গে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো সভ্য শহর প্ল্যানিংয়ের সঙ্গে আপস করেনি। প্ল্যানিংয়ে বলা হয়েছে, কৃষিজমি ভরাট করা যাবে না, জলাশয় ভরাট করে আবাসন বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এখন ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে প্ল্যানিং চেঞ্জ করল। যেমন ড্যাপ এখন সংশোধনের অপেক্ষায় আছে। প্ল্যানিংয়ে আপস করার মানে কী দাঁড়াল? মানে দাঁড়াল, পূর্ণাঙ্গ দেহ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার বা কিডনি অপসারণ করা। কিডনি ছাড়া তো মানুষ বাঁচতে পারে। হয়তো সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে না। গত তিন দশকে সরকার ব্যবসায়ীদের চাপে ঢাকার ফুসফুস, কিডনি, লিভার, হার্ট সবকিছু ফেলে দিয়েছে। এখন ঢাকা একটি সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। যার শেষ উদাহরণ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন করে ভবনের উচ্চতা ও জনঘনত্ব বাড়ানোর মতো আত্মবিধ্বংসী সিদ্ধান্ত।’

নগর পরিকল্পনায় বারবার কাটছাঁট করার কারণে ঢাকার পরিস্থিতি এখন জটিল পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কোনো নিয়ম বা আইন দিয়ে সমাধান করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় বলা হয়ে থাকে ভূমিকম্প হলে ভবন থেকে বের হয়ে সড়কে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু আজ (গতকাল) দেখা গেল সড়কে দাঁড়ানো ব্যক্তি ভবনের রেলিং ধসে নিহত হয়েছেন। ঢাকা শহরে সরু রাস্তার ওপর উঁচু উঁচু দালান আর দুর্বল কাঠামো এ শহরকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তাই এ শহরের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য যদি বিজিএমইএর মতো অনেক ভবন ভাঙার প্রয়োজন হয়, তবুও মানুষের জীবনের স্বার্থে ভাঙতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে আমরা দেখেছি, ২০১০ সালে হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মারা গেছে। অথচ একই বছর চিলিতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মাত্র সাড়ে পাঁচশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কারণ, হাইতিতে প্ল্যানিং ও বিল্ডিং কোড প্রয়োগ করা হয়নি। অন্যদিকে চিলি প্ল্যানিংয়ে এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়নি। কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড প্রয়োগ করেছে। এখন আমাদের সামনে দুটো চিত্রই আছে। আমরা কি হাইতির মতো লাখ লাখ মানুষের প্রাণের ঝুঁকি নেব নাকি চিলির মতো নিরাপদ নগরী গড়ে তুলব—সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে।’

রাজধানীর আশপাশের এলাকা বারবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়ার কারণে বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে দোহারে, এখন মাধবদীতে ভূমিকম্প উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় না আছে উদ্ধারের ব্যবস্থা, না আছে মানুষের কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা। পুরান ঢাকায় ম্যাসিভ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার টিম যাওয়ার মতো সড়কও নেই। রাজধানীর চারপাশের সাভার, কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ—এসব এলাকায়ও হু হু করে নিয়মবহির্ভূত ভবন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। রাজউককে এগুলো নিয়মের মধ্যে আনতেই হবে। প্রয়োজনে থার্ড পার্টি নিয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে নগরীকে মৃত্যুপুরীর দিকে ঠেলে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ভূমিকম্প বা অগ্নিদুর্ঘটনার সময় আশপাশের খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম। কিন্তু ঢাকায় ন্যূনতম খোলা জায়গাও নেই। বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ড হলো রাজধানীর সড়কগুলো ন্যূনতম ৩০ ফুট হতে হবে। তখন যেকোনো দুর্যোগে দ্রুত উদ্ধারকাজ করা সহজ হবে। কিন্তু ঢাকায় সড়কের পরিমাণ দিন দিন সংকুচিত করে ভবনের উচ্চতা বাড়ানো হচ্ছে। এটা ঢাকাকে ধ্বংসের আয়োজন ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করেন রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ করে হলেও প্রতি এলাকায় প্ল্যানিংয়ের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ফাঁকা স্থান ও জলাশয় সরকারকে নিশ্চিত করতেই হবে। সাধারণ মানুষের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কোনো গাফিলতি হলে দায় আমাদের ওপরই চাপবে।’