Image description

পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন রাখাকে কেন্দ্র করে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর ওই প্রশ্ন প্রণয়নকারী অধ্যাপককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিতর্কিত প্রশ্ন রাখার অভিযোগে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বিএ (অনার্স) সোশ্যাল ওয়ার্ক প্রথম সেমিস্টারের ‘ভারতে সামাজিক সমস্যা’ শীর্ষক পরীক্ষায় একটি ১৫ নম্বরের প্রশ্ন ঘিরে এই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। প্রশ্নটিতে শিক্ষার্থীদের কাছে ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতন নিয়ে উদাহরণসহ আলোচনা করতে বলা হয়েছিল।

ওই প্রশ্নপত্রটি প্রস্তুত করেছিলেন অধ্যাপক বীরেন্দ্র বালাজি শাহারে। প্রশ্নটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে শিক্ষকের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলা হিসেবে দেখছে বলে জানায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন জমা না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অধ্যাপককে বরখাস্ত রাখা হবে। একাডেমিক দায়িত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সিএ শেখ সাফিউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক আদেশে অধ্যাপক শাহারের বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই বরখাস্ত বহাল থাকবে। একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, বরখাস্তকালীন সময়ে অধ্যাপকের কর্মস্থল হিসেবে দিল্লিকেই সদর দপ্তর ধরা হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি দিল্লি ছাড়তে পারবেন না।

ওই আদেশে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশে এফআইআর করার কথাও উল্লেখ ছিল। তবে পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানায়, এই মুহূর্তে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা করার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এক কর্মকর্তা জানান, আদেশের ভাষা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবেই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার প্রশ্নপত্রটির ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রশ্নটির ভাষা ও উদ্দেশ্য নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং এতে রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতের অভিযোগ করেন।

বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে যখন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বরখাস্তের নোটিশটি শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মতে, প্রশ্নটিতে কু-উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত রয়েছে।

এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কোনও বিবৃতি দেয়নি জামিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে প্রশ্নটি কীভাবে তৈরি ও অনুমোদন দেয়া হয়েছিল এবং তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনার লঙ্ঘন কি না। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এই ঘটনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।