Image description

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ রাগি বলেছেন, অজ্ঞাতপরিচয়ে আরব ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে লেবানন সতর্কবার্তা পেয়েছে যে, ইসরায়েল দেশটির বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

 

লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সিকে তিনি বলেন, ‘লেবানন এবং এর স্থাপনাগুলোকে সম্ভাব্য যে কোনো হামলা থেকে রক্ষার জন্য বৈরুত কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানায়, লেবাননের সরকার ও সেনাবাহিনী যদি ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ হিজবুল্লাহর অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহ–সম্পৃক্ত স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের হামলার জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের কাজ কার্যকরভাবে সম্পন্ন না হলে তারা এককভাবেই পদক্ষেপ নেবে। এতে কয়েক দিনের যুদ্ধ বা উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্টে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হলেও তা করা হবে।

ইউসুফ রাগি স্পষ্ট করে বলেন, ‘চলমান মেকানিজম কমিটির বৈঠকগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো প্রচলিত আলোচনা নয়।’ ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ২০২৪ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এই মেকানিজম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির কাজ হলো যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন তদারকি করা। এতে লেবানন, ফ্রান্স, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তী বাহিনী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে ফিরে যেতে চাই, যদিও এ পর্যায়ে একটি শান্তি চুক্তি অনেক দূরের বিষয়।’ গাজাকে সমর্থন জানানো এবং লেবাননকে রক্ষার অভিযানে হিজবুল্লাহর অস্ত্রের কার্যকারিতা সীমিত প্রমাণিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

তিনি আরও জানান, লেবানন সরকার হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংলাপে রয়েছে, যাতে সংগঠনটিকে অস্ত্র হস্তান্তরে রাজি করানো যায়। তবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের ভূমিকাও নেতিবাচক। তেহরানের নীতিগুলো অস্থিতিশীলতার উৎস।’

তিনি আরও বলেন, ‘লেবাননের ইরানের সঙ্গে একটি সমস্যা রয়েছে, তবে সংলাপের পথ খোলা আছে। শর্ত হলো, ইরানকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং দেশের ভেতরে কোনো অবৈধ সংগঠনকে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।’

ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যমে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযান সম্প্রসারণের প্রতিবেদনটি ছিল দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর চ্যানেল ১৩ জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে আয়োজিত একটি বিশেষ বৈঠকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা বাড়ানোর একটি অপারেশনাল পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে লেবাননে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে। এর আগে প্রায় এক বছর ধরে চলা হামলায় ৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন, যার পটভূমিতে ছিল গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধ। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের ১ হাজার ৩৮টি হামলায় অন্তত ৩৩৫ জন নিহত এবং ৯৭৩ জন আহত হয়েছেন।

সূত্র: আনাদোলু