প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষের পর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। আগামী ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার প্রকাশিত রয়্যাল ডিক্রিতে অনুতিন জানান, প্রাণঘাতী সীমান্ত উত্তেজনাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিন মাস আগে গঠিত তার সংখ্যালঘু সরকার কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না। তিনি বলেন, “উপযুক্ত সমাধান হলো পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া… যা জনগণের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার পথ।”
ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক হওয়া অনুতিন আগস্ট ২০২৩ থেকে তিনজন প্রধানমন্ত্রীর পর দেশটির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই বলেছিলেন, জানুয়ারির শেষের দিকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবেন। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে এবার আগেই নির্বাচন ঘোষণা করলেন।
গত মাসে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনুতিন ও তার ভুমজাইথাই পার্টির তীব্র সমালোচনা হয়। ওই বন্যায় অন্তত ১৭৬ জন নিহত হয়।
পার্লামেন্ট ভাঙার ঘোষণার সময় দেশটি কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
রয়্যাল ডিক্রিতে অনুতিন লেখেন, “সরকার দেশের জরুরি সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে… কিন্তু দেশ পরিচালনায় স্থিতিশীলতা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে অস্থিতিশীল অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সরকার ধারাবাহিক, কার্যকর ও স্থিতিশীল প্রশাসন দিতে পারছে না।”
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত আসে এমন সময়, যখন তার সরকার আর সমর্থন পাচ্ছে না যুবসমাজনির্ভর প্রগতিশীল পিপল’স পার্টির, যারা পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় দল এবং আগে অনুতিনকে সমর্থন দিয়েছিল। এ দু’দল আদর্শিকভাবে একে অপরের সম্পূর্ণ বিপরীত।
সমর্থনের বিনিময়ে পিপল’স পার্টি কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল—সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান সংস্কার এবং চার মাসের মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়া। এখন দলটি অভিযোগ করছে, ভুমজাইথাই সেসব প্রতিশ্রুতি রাখেনি। শুক্রবার তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিল বলে থাই গণমাধ্যম জানিয়েছে।
গত এক বছরে দেশটি চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আদালতের রায়ে দুইজন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। অনুতিনের আগের প্রধানমন্ত্রী প্যেতংটার্ন শিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করা হয় নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে—একটি ফাঁস হওয়া ফোন কলে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন এবং থাই সেনাবাহিনীকে সমালোচনা করেছিলেন।
তারও আগে স্রেত্থা থাভিসিনকে বরখাস্ত করা হয় নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগে, কারণ তিনি তার মন্ত্রিসভায় এমন একজন সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাকে এক সময় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।