যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের নথিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপকে সতর্ক করে বলেছেন,‘পশ্চিমা’ পরিচয় হারিয়ে বসবে তারা, যদি না ভুল শুধরে নেয়। দ্বিতীয় মেয়াদে পদে বসার পর থেকেই ইউরোপের সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প। রাশিয়া ইস্যুতে তাকে বিরাগভাজনও বোঝা যাচ্ছে।
জাতিসংঘে ট্রাম্প পশ্চিম ইউরোপের অভিবাসন ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। এবার প্রকাশিত নথিতেও সরাসরি সতর্ক করে বসেছেন। তবে এরমাঝেই আরও বড় দাবি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়নবিষয়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত গর্ডন সন্ডল্যান্ড।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ইউরোপের ঝামেলা নিজের মাথায় নিতে চান না ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মনে করেন ইউক্রেন ইস্যু ইউরোপের ঝামেলা। তাই এটি সমাধানে ইউরোপের সামনে আসা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রকে সামনে ঠেলা নিয়েও নাকি ট্রাম্প অসন্তোষ জানিয়েছেন।
বিবিসি রেডিও-৪’কে সন্ডল্যান্ড বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে পারে, তবে সামনের সারিতে থাকা উচিত ইউরোপের। ট্রাম্প আসলে সেই দিকেই ইঙ্গিত করছেন।’
সন্ডল্যান্ড বলেন, গত তিন দশক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যেভাবে ব্যবসা ও কূটনীতি পরিচালিত হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি চান না ট্রাম্প। তার ভাষায়, আগের নিয়মে চললে যুক্তরাষ্ট্রকেই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা, চাপ প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে পুতিনকে হুঁমকি দেওয়ার ভূমিকা নিতে হতো। আর এসব ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রই সংঘাতে জড়াত। ইউরোপ শুধু দেখত। এটাই ট্রাম্প এবার এড়াতে চান।’
কদিন আগে প্রকাশিত ট্রাম্প প্রশাসনের নথিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রসঙ্গেও বলা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ইউরোপে ‘আত্মবিশ্বাসের অভাব’ রয়েছে। ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রকে উল্লেখযোগ্যভাবে জড়িত থাকতে হবে বলে নথিতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়নবিষয়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত মনে করেন, রাশিয়া ইস্যুতে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে সহায়ক চরিত্রে। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের দৃষ্টিতে রাশিয়া-সংক্রান্ত যেকোনো বড় উদ্যোগে নেতৃত্ব এখন ইউরোপেরই নেওয়া উচিত, আর যুক্তরাষ্ট্র থাকবে সহায়ক ভূমিকা নিয়ে।’
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কিকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন যে খসড়া শান্তি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, তা এখনও জেলেনস্কি পড়ে দেখেননি। ট্রাম্প বলেন, ‘জেলেনস্কি এখনও প্রস্তাবটি পড়েননি—এটা বলতে গিয়ে কিছুটা হতাশ বোধ করছি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যেকোনো মূল্যে যুদ্ধ থামাতে চান। তবে ইউরোপের চাওয়া দেশটির সব অঞ্চল ফিরিয়ে আনা এবং শক্তিশালী অবস্থানে থাকা। যদিও পুতিন এসবের বিরোধী। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আপাতত লন্ডনে আছেন জেলেনস্কি। সেখানে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও জার্মানির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবেন জেলেনস্কি। এদিকে শান্তি চুক্তি বিলম্ব হওয়ায় রাশিয়া হামলা বাড়িয়েছে।