ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তাপ ছড়িয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে ঘিরে বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর দাবি তুলেছেন। এসব মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে ইতিহাসবিদদের মধ্যেও নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
রাজনাথ সিং গুজরাটের ভাদোদরার কাছে সাধলি গ্রামে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ঐক্য যাত্রা।
রাজনাথ সিং বলেন, নেহরু সরকারি তহবিল দিয়ে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, নেহরুর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন সর্দার প্যাটেল।
রাজনাথের বক্তব্যে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কারণ বাবরি মসজিদ বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে অন্যতম সংবেদনশীল বিতর্ক হিসেবে রয়েছে। সিং দাবি করেন, প্যাটেল সরকারি অর্থে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে কখনোই সম্মতি দেননি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্যাটেলের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ নেহরু কূয়া আর সড়ক নির্মাণে ব্যয় করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
রাজনাথ সিং বলেন, এসব কাজ সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন প্যাটেলের স্মৃতিকে মূল্যহীন দেখাতে সে সময়কার শাসকগোষ্ঠী নানা উপায়ে তৎপর ছিল।
রাজনাথ সিং তার বক্তব্যে প্যাটেলকে উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন প্যাটেল তোষণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না। নেহরুর সঙ্গে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশ গঠনে নিজের ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি দাবি করেন প্যাটেল চাইলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি গান্ধীর অনুরোধে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন।
তিনি বলেন ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে বেশিরভাগ প্রাদেশিক কমিটি প্যাটেলের নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু গান্ধী তাকে নেহরুকে সমর্থন করতে বলেন। প্যাটেল তা মেনে নেন।
রাজনাথ বলেন, ইতিহাসের পাতায় প্যাটেলকে তার প্রাপ্য স্থানে ফেরানোর কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, পূর্বের শাসকরা ইচ্ছাকৃতভাবে প্যাটেলের উত্তরাধিকার আড়াল করতে চেয়েছিল। মোদির সরকার স্ট্যাচু অব ইউনিটি নির্মাণের মাধ্যমে সেই সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে।
রাজনাথ সিং তার বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন নেহরু নিজের জন্য ভারতরত্ন নিলেও প্যাটেল সে সম্মান পাননি। তিনি বলেন, এটি ইতিহাসকে উপেক্ষা করার একটি উদাহরণ। তিনি আরও দাবি করেন, প্যাটেলের নির্দেশনা গুরুত্ব পেলে কাশ্মীর ইস্যু এত দীর্ঘস্থায়ী হতো না।
তিনি বলেন, প্যাটেল আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতেও তিনি পিছপা হতেন না। রাজনাথ উদাহরণ হিসেবে হায়দরাবাদ সংযুক্তির কথা উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, প্যাটেলের দৃঢ় অবস্থান না থাকলে হায়দরাবাদ ভারত ইউনিয়নের অংশ নাও হতে পারত।
রাজনাথ সিং আরও বলেন, মোদির সরকার অপারেশন সিন্দুরের মাধ্যমে প্যাটেলের মূল্যবোধ ধরে রেখেছে। তিনি বলেন, যারা শান্তির ভাষা বুঝতে চায় না তাদের কাছে দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতাই ভারতের শক্তি। তার দাবি, অপারেশন সিন্দুর নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা চলছে।
রাজনাথের এসব বক্তব্য ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নেহরু ও প্যাটেলকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্রচলিত। তবে এবার সরকারি পর্যায় থেকে অতীতের এমন ব্যাখ্যা সামনে আসায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব মন্তব্য ক্ষমতাসীন দলের প্রচারনীতির অংশ বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো বিষয়টিকে ইতিহাসকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।