Image description

মাত্র সাড়ে সাত ডলার পকেটে নিয়ে ওমানে পা রেখেছিলেন পুথান নাদুভাক্কাত্ত চেন্থামারাশা মেনন (যিনি পি.এন.সি. মেনন নামেই বেশি পরিচিত)। সালটা ছিল ১৯৭৬। এই অতি সাধারণ সূচনা থেকেই মেনন আজ বিশাল বহুজাতিক রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণশিল্পের মালিক। শোভা’র প্রতিষ্ঠাতা মেননের প্রতিষ্ঠান বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের জীবন ধারণে সহায়তা করছে।

ওমানে এসে মেনন প্রথমে একটি ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। দ্রুতই এটি রাজকীয় প্রাসাদ এবং জাঁকজমকপূর্ণ মসজিদ নির্মাণের চুক্তি পেতে শুরু করে। তার সাম্রাজ্য বিস্তার হতে থাকে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং কাতারে।

শোভার গ্যালারির উদ্বোধনে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, মেনন তার সহজাত রসবোধ আর বিনয়ের মধ্য দিয়েই সবার নজর কাড়েন। বিলিয়নেয়ার হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহজ-সরল।

নিজের জীবনের পথচলা নিয়ে মেনন বলেছিলেন, আমার জীবনে একাধিক ধাপ রয়েছে। ৩৫ বছর আগে কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমার স্বপ্নে কতগুলো পদক্ষেপ আছে? আমি বলেছিলাম আমার হাজারটা পদক্ষেপ আছে, আর আমি আছি ১০তম ধাপে। শোভার গ্যালারি হলো আমার ২০তম পদক্ষেপ। তিনি আরও জানান, তার ৪৪ বছর বয়সী প্রকৌশলী ছেলে রভি মেনন ইতোমধ্যে কোম্পানির নেতৃত্বে আসায় মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়েছে।

শোভার সাফল্যের মূল ভিত্তি হলো পি.এন.সি. মেননের পশ্চাৎমুখী একীকরণ নীতি। এই মডেলের অধীনে নকশা থেকে শুরু করে উৎপাদন ও নির্মাণ; সবকিছুই অভ্যন্তরীণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যদিও শুরুতে এই পদ্ধতি নিয়ে সংশয় ছিল, তবে ২০১৯ সালে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এটিকে একটি কেস স্টাডি হিসেবে গ্রহণ করে তার কার্যকারিতা ও প্রতিলিপিযোগ্যতার উপর সিলমোহর দেয়। মেনন বলেন, পশ্চাৎমুখী একীকরণ মডেল প্রথম থেকেই ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে এটি আরও বৃহত্তর রূপ নিয়েছে।

বর্তমানে শোভার অধীনে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ কাজ করে। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের ১৩টি রাজ্য এবং ২৪টি শহরে তাদের প্রকল্পগুলোতে সূক্ষ্মতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করে এই কর্মীবাহিনী। প্রকৌশলী রবি মেনন ২০২৪ সালে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। বাবার এই নীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। রভি মেনন বলেন, এই গুণগত মান ও নির্ভুল অনুভূতিই তার ৫৬ বছরের যাত্রায় ছিল এবং তা আজও বজায় আছে। পশ্চাৎমুখী একীকরণ আমাদের সেই বিশেষ সুবিধা দেয়, যাতে আমরা ওই স্তরের সূক্ষ্মতা এবং বিস্তারিত কাজ সরবরাহ করতে পারি।

দুবাইয়ের শোভা হার্টল্যান্ড এবং ডিস্ট্রিক্ট ওয়ানের মতো ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলো এই মডেলের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই কৌশল শোভার প্রতিযোগীদের তুলনায় দ্রুত সময়ে ও উচ্চ মান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এই বছরের হিসাব অনুযায়ী, ৬৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৬৪৯টি লেনদেন থেকে তারা ১৬.৪৭ বিলিয়ন দিরহাম বিক্রির মাইলফল অর্জন করেছে। 

বিশাল সাম্রাজ্য গড়ার পাশাপাশি মেনন সমাজসেবার প্রতিও গভীরভাবে নিবেদিত। তিনি তার সম্পদের ৫০ শতাংশ নারী ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ক্ষুধা নিবারণ এবং স্যানিটেশনের মতো জনহিতকর কাজে দান করার অঙ্গীকার করেছেন। মেনন জানান, ধরুন আমরা যদি ১০০ ডলার আয় করি, তবে ৫০ ডলার যায় সমাজসেবার জন্য। ফোর্বসের র‍্যাংকিং অনুযায়ী, ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তিনি ওমানের সবচেয়ে ধনী নাগরিক এবং ভারতের ধনীতমদের মধ্যে ৮৭তম স্থানে রয়েছেন।


নিজের পথচলা নিয়ে মেনন নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু উপদেশ দেন। তিনি বলেন, এটা আমার জন্য এক দুর্দান্ত যাত্রা ছিল, কারণ আমি ৭.৫০ ডলার নিয়ে উপসাগরে এসেছিলাম। আমি কাজকে ভালোবাসি। আমি প্রতিদিন আমার অফিসে আসি, যা আমাকে আনন্দ দেয় এবং আমরা সবসময় নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাই ও আরও ভালো করার চেষ্টা করি। নবীন ডেভেলপারদের প্রতি তার পরামর্শ ছিল স্বাধীন থাকার। তিনি বলেন, আমার উপদেশ হলো, অন্যের পরামর্শ নেবেন না। হার্ভার্ডের কেস স্টাডির উদাহরণ দিয়ে মেনন বলেন, প্রথমে তারা পশ্চাৎমুখী একীকরণ নীতি মানতে রাজি ছিলেন না কিন্তু এখন এটি পাঠ্য বিষয়। তাই আমার পরামর্শ হলো, অন্যের পরামর্শ নেবেন না।

সূত্র: গালফ নিউজ