Image description

বিহারের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর এবার বিজেপির নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে। আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে রাজ্যটিতে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিজেপি কৌশল সাজিয়ে ফেলেছে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, এবারের রণকৌশলে বিজেপির মূল লক্ষ্য মমতা নন বরং অভিষেক। তারা তৃণমূল কংগ্রেসের সেই সব কর্মীদের নিশানা করতে চায় যাদের অভিষেক ব্যানার্জির প্রতি তেমন আনুগত্য নেই। দলের নিচু স্তরের এই সমর্থনকে দুর্বল করাই মূল উদ্দেশ্য। 

তবে একইসঙ্গে, নেহেরু-গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে বিজেপির বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র স্বজনপ্রীতি বা ‘ডায়নেস্টিক পলিটিক্স’-এর ইস্যুটি তৃণমূলের ক্ষেত্রে অভিষেকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, অভিষেকের প্রতি দলের অন্দরে মামতার মতো আনুগত্য না থাকায় তাদের পক্ষে তৃণমূলের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নিজেদের দিকে টেনে নেওয়া সহজ হবে।

তবে, এবারের কৌশলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো বিজেপি এখন আর দলবদলকারী নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে চাইছে না। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীসহ একাধিক তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দিলেও এবার দলত্যাগী নেতাদের দলে টানার কোনো বড় পরিকল্পনা নেই। কারণ বিজেপি মনে করছে, দলবদলকারীরা দলের ভোটের হারে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। বরং তৃণমূলের নিবেদিত কর্মীদের দলে যুক্ত করলে, সাংগঠনিক শক্তি বাড়বে।

অন্যদিকে, বিহারে যেমন জাতপাতের সমীকরণকে কাজে লাগানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সেই কৌশল চলবে না। এখানে বিজেপি ধর্মীয় ও আঞ্চলিক সমীকরণে ভারসাম্য রেখে চলতে চাইছে। রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট তৃণমূলের পক্ষে থাকলেও তা মাত্র ৩০ থেকে ৪০টি আসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিজেপি অন্যান্য অঞ্চলে হিন্দু ভোটারদের মেরুকরণের মাধ্যমে ফায়দা তোলার আশা করছে।

এদিকে, বহিরাগত ইস্যুটিও এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে বিজেপি। তারা মমতাকে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের ইস্যুতে আক্রমণ করবে, তেমনি তৃণমূলও গুজরাট থেকে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বহিরাগত তকমা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বিরোধী শক্তি হিসেবে চিত্রিত করবে।

গত চারটি নির্বাচনে (দুটি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রীয়) বিজেপি মোট ১০০টিরও বেশি আসনে জয় পেয়েছে। এই সাফল্যকে ভিত্তি করে তারা এবার ১৬০ থেকে ১৭০টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। যদিও এই লক্ষ্যে পৌঁছানো বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেখানে ১৮টি আসন ও ৪০.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে ২০২১ রাজ্য নির্বাচনে তা কমে দাঁড়ায় ৭৭ আসন ও ৩৮.১৪ শতাংশ ভোটে। তৃণমূলের সেরা ভোটের ভাগ প্রায় ৪৮ শতাংশ, অর্থাৎ বিজেপিকে জিততে হলে আরও অতিরিক্ত ৬ শতাংশ ভোট অর্জন করতে হবে, যা তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতাকে বড় পরীক্ষায় ফেলবে।

সূত্র: এনডিটিভি