যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নথি প্রকাশের বিল পাস হওয়ার পর অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করছেন হাউস স্পিকার মাইক জনসন (রিপাবলিকান–লুইজিয়ানা), ক্যাপিটল হিল, ওয়াশিংটন ডিসি, ১৮ নভেম্বর ২০২৫।
জেফরি এপস্টাইন ছিলেন একজন মার্কিন ধনকুবের বিনিয়োগকারী। কিন্তু তার নাম আজ আলোচিত নয় অর্থনীতিতে অবদানের জন্য—তার নাম ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলছে এক গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোড়ন, যেটি যৌন নিপীড়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও গোপন রাজনৈতিক সম্পর্কের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে।
২০০৮ সালে এপস্টাইন যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, কিন্তু মাত্র ১৩ মাস জেল খাটার পর তিনি ছাড়া পান। অনেকের বিশ্বাস, তার প্রভাবশালী বন্ধুবান্ধব ও রাজনৈতিক সংযোগের কারণেই সে সময় তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়, অভিযোগ ছিল—তিনি নাবালিকা মেয়েদের যৌন নির্যাতনে জড়িত। কিন্তু বিচারের আগেই তিনি নিউ ইয়র্কের একটি কারাগারে মারা যান। তার মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ বলেই ঘোষণা দেওয়া হয়, কিন্তু সেই মৃত্যু ঘিরে এখনও রয়েছে নানা প্রশ্ন ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস এক প্রস্তাব পাশ করেছে, যেখানে এপস্টাইন সংক্রান্ত বিচার বিভাগের সকল অপ্রকাশিত নথি জনসম্মুখে প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসে এই প্রস্তাব পাশের সময় উপস্থিত ছিলেন এপস্টাইনের নিপীড়নের শিকার কয়েকজন নারী। তারা শিশু বয়সে তার হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন। সেই নারীরা নিজেদের ছোটবেলার ছবি হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কংগ্রেস সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
এই সিদ্ধান্তটি শুধু ন্যায়বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়—এটি আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কারণ এপস্টাইন কেবল অপরাধী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেই অভিজাত গোষ্ঠীর অংশ, যারা অর্থ, ক্ষমতা ও রাজনীতির এক অন্ধকার সীমানায় ঘোরাফেরা করেন। তার বন্ধু তালিকায় ছিলেন বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি, যাদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ, ধনকুবের এবং এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্টরাও।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এপস্টাইনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ রাখতেন, যদিও পরবর্তীতে তিনি দাবি করেন, অনেক আগেই তাকে‘নিজের ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়ে তার আচরণ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক, বিশেষ করে যখন দেখা যায় তিনি এপস্টাইন সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশে প্রথমে আপত্তি জানিয়ে ছিলেন।
এই নথিগুলো প্রকাশিত হলে হয়তো জানা যাবে, কারা কারা এই অপরাধচক্রে জড়িত ছিলেন। অনেকেই বলছেন, এপস্টাইনের মৃত্যু ছিল সত্যের মৃত্যু নয়—বরং শুরু। এখন দেশটির মানুষ আশা করছে, ক্ষমতাবানদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং যারা এই ভয়ংকর অপরাধে জড়িত, তারা শাস্তি পাবেন।
এই ঘটনায় একটি বড় বার্তা আছে—অর্থ, খ্যাতি বা ক্ষমতা কোনো অপরাধীর আশ্রয় হতে পারে না।