Image description

নিউ আরবের বিশ্লেষণ

গাজা যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইসরাইলি সমর্থনপুষ্ট গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দাবি করেন। পরিকল্পিত লুটপাট, ইসরাইলকে সহযোগিতা এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য বিচারের ভয়ে তিনি এই সুরক্ষা দাবি করেন।

যুদ্ধবিরতির শুরুতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সাহায্য বন্ধ করে দেয়। তাদের ইসরাইলে থাকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া গোষ্ঠীটির সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরাইল। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাবের পরিবর্তন এনে গাজার ৫৮ শতাংশ ভূমি নিজেদের দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

এরপর আবু শাবাব পুনরায় ইসরাইলি সাহায্য নিয়ে নিজেদের সুসংগঠিত করে যুদ্ধ চলমান রাখেন। গাজায় নাগরিক সংঘাত, গুপ্তহত্যা, হিট অ্যান্ড রান অপারেশন, অপহরণ, গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি।

একইভাবে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় আবু শাবাব গোষ্ঠীর মতো গাজায় আরো কয়েকটি গ্রুপ তৈরি করেছে ইসরাইল। খান ইউনুসে হুসাম আল-আসতাল, উত্তরে বাইত লাহিয়ায় আশরাফ আল-মানসি এবং পূর্ব গাজায় রামি হালস তার মধ্যে অন্যতম। গাজার জনমানবহীন ৫৮ শতাংশ ভূখণ্ড ইসরাইলের হয়ে পাহারা দেওয়ার জন্য তারা কাজ করছে।

সশস্ত্র এই গোষ্ঠীগুলো হঠাৎ করে আবির্ভূত হয়নি। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত এবং প্রতিরক্ষা বাহিনী পলাতক অপরাধীদের শনাক্ত করে এসব গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের পরে কারাগার থেকে পালিয়ে আসা আবু শাবাবের মতো ব্যক্তিদের। ইসরাইল ক্ষমতা, অর্থ, অস্ত্র, যানবাহন, বাড়ি-ঘর এবং বিলাসিতার প্রলোভন দেখিয়ে এই ব্যক্তিদের একত্রিত করেছে।

এই গ্রুপগুলোকে প্রধানত চারটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে ইসরাইল। যার মধ্যে অন্যতম হলো- গাজার ৯০ শতাংশ সাহায্য লুট করে দুর্ভিক্ষ তৈরি করা, সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা, বিশৃঙ্খলা তৈরি করা এবং প্রয়োজনে ইসরাইলের পক্ষে গাজায় যুদ্ধ করা। ইসরাইল এই গ্রুগপুলোর মধ্য দিয়ে পুরো উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ তৈরি করতে চায়, যাতে আন্তর্জাতিক চাপে পড়তে না হয়।

এই কৌশলটি ১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরাইলের সাউথ লেবানন আর্মি (এসএলএ) গঠনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এসএলএ সাবরা এবং শাতিলা শরণার্থী শিবিরে গণহত্যা চালিয়ে সাড়ে তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। তবে ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে যাওয়ার পর ওই গ্রুপটি ভেঙে পড়ে। যার সদস্যরা পরে ইসরাইলে পালিয়ে যায়। এছাড়া অনেকে বিচারের মুখোমুখি হয়।

অন্যদিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইল গাজায় অবৈধ অস্ত্র ঢুকতে সুযোগ দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে নিজেরা সরাসরি ওই গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে।

তবে গত জুনে ইসরাইলি সংবাদপত্র ইয়েদিওত আহরোনোথ স্বীকার করে, আবু শাবাব মিলিশিয়ার উপর ইসরাইলের বিনিয়োগ ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, গ্রুপগুলোর আকার এখনো তুলনামূলকভাবে ছোট। এছাড়া এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অনেকে ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।