
গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কিছু সংশোধন চাচ্ছে হামাস। শনিবার (৩১ মে) এই সংশোধনীর কথা জানিয়েছে হামাস। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ একে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি এবং ১৮ জনের মৃতদেহ হস্তান্তরের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি চায়। সেই সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় রয়েছে হামাস, যেগুলো ইসরায়েল ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।
হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবগুলোর প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া ‘ইতিবাচক’ হলেও তারা কিছু পরিবর্তন চাচ্ছে। তবে কী পরিবর্তন চাওয়া হয়েছে, তা তিনি বিস্তারিত বলেননি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তার সরকার উইটকফের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু হামাস এখনও পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে পরাজিত করার অভিযান অব্যাহত রাখবে।’
এর আগে শনিবার হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই প্রতিক্রিয়ার উদ্দেশ্য একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জন, গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার এবং আমাদের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।’
প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং গাজায় আটক থাকা ৫৮ জন জিম্মির মধ্যে ২৮ জনকে মুক্তির বিনিময়ে ১,২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করা হবে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম পরে বলেন, তারা উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেনি বরং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া প্রস্তাবিত চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দূতের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণের অভিযোগ তোলেন।
রয়টার্সকে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস যে পরিবর্তন চাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে জিম্মি মুক্তির তিন ধাপে সম্পন্ন হওয়া এবং সহায়তা বিতরণ গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত করা। এছাড়াও, হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার নিশ্চয়তা চায়।
ইসরায়েল হামাসের এই শর্তগুলো আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। পরিবর্তে সংগঠনটির সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ও সামরিক ও শাসনক্ষমতা থেকে অপসারণ, পাশাপাশি বাকি ৫৮ জন জিম্মির মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে।
ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন সর্বশেষ প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি খুব কাছাকাছি। হোয়াইট হাউজ বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েল প্রস্তাবিত শর্তে সম্মত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় স্থল ও বিমান হামলা পুনরায় শুরু করে। এই অভিযানে গাজা সীমান্তের বৃহৎ অংশ ফাঁকা করে ফেলা হয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ উপকূলবর্তী এলাকায় ও দক্ষিণের খান ইউনিস শহরের আশপাশে সংকুচিত অবস্থায় বসবাস করছে।
মার্চের শুরুতে ইসরায়েল গাজায় সমস্ত রকম সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বেড়ে যায়।