ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা ভূমিকম্পের আতঙ্কের পর কর্মচারীদের জন্য নির্মিত নবনির্মিত স্বাধীনতা টাওয়ার ভবনে অবস্থান নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছে, তবে এখনও কিছু শিক্ষার্থী ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন। এদিকে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ২২ নভেম্বর রাতে একজন ছেলে ও মেয়ের অনৈতিক কার্যকলাপের অংশবিশেষ ভিডিও আকারে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, তারা সেখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন। পরে ডাকসুর একজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন এবং তাদের বের করে দেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) কর্মচারীদের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পের পর আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা কর্মচারীদের জন্য নবনির্মিত স্বাধীনতা টাওয়ার ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একাধিকবার আলোচনা করলেও এখনো কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী ভবনটির বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন।
এদিকে, স্বাধীনতা টাওয়ারের এসব ফ্ল্যাটে শিক্ষার্থী ছাড়া নানা ধরনের লোকজনের নিয়মিত আনাগোনা ও উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ভবনটিতে শিক্ষার্থী ও বহিরাগত ব্যক্তিদের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপের অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে, যা প্রশাসনের নজরেও এসেছে। সংশ্লিষ্ট কপিও এর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
এছাড়া রাতে ভবনের বিভিন্ন রুমে কিছু শিক্ষার্থীকে অনেক রাত পর্যন্ত হৈ-হুল্লোড় করা, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা দেওয়া এবং উচ্চ শব্দে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এসব কারণে ভবনটিতে বসবাসরত কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা টাওয়ার ভবনের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং কর্মচারী পরিবারগুলোর উদ্বেগ দূর করতে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কর্মচারী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা রাতে যখন নিজ নিজ রুমে থাকি, তখন প্রায়ই রাত ১টা বা ২টার দিকে ছেলে-মেয়েদের একসাথে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখি। অনেক সময় তাদের আচরণ এমন অনৈতিক ধরনের হয় যে আমাদের জন্য ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা যারা এখানে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে থাকি, তাদের সামনে এ ধরনের দৃশ্য দেখতে হলে আমরা সত্যিই অসহায় বোধ করি। একদিকে লজ্জা, অন্যদিকে অস্বস্তি দুটোর মাঝেই পড়তে হয় আমাদের।’
তারা আরও বলেন, ‘এই সমস্যাটা শুধু ভবনের ভেতরে প্রবেশেই সীমাবদ্ধ নয়। রাত গভীর হলে তারা ছাদে উঠে হৈচৈ করতে থাকে গান বাজায়, উচ্চস্বরে চিৎকার-চেঁচামেচি করে, নিজেদের মতো করে ভীষণ শব্দ করে। এর ফলে পুরো ভবনের পরিবেশ অস্থির হয়ে ওঠে। আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে ভয়-আতঙ্কে থাকি, তা বলে বোঝানো যাবে না। কখন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়, কখন কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়—এই ভেবে আমরা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি। রাতে স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতেও পারি না। শুধু ভয় আর অস্বস্তির মধ্যেই সময় কাটে আমাদের।’
ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্য বলেন, ‘রাতে আমরা দেখি ছেলে-মেয়ে একসাথে ভবনে ঢুকছে। আমরা চোখে দেখেও বলতে পারি না এই ভবনে যেহেতু অনেক কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকে, তাই নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না কারা বৈধভাবে প্রবেশ করছে আর কারা অবৈধভাবে ঢুকছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও সবসময় কাউকে থামানো বা জিজ্ঞেস করা সম্ভব হয় না। কারণ ভুল মানুষকে প্রশ্ন করলে উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে ওঠানামা করেন, তাদের মধ্যে কারা বাসিন্দা আর কারা ভিজিটর এটা রাতের অন্ধকারে বোঝা খুবই কঠিন। তাই সন্দেহ হলেও আমরা নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। এই কারণে রাতের বেলায় কে প্রবেশ করছে, কে করছে না—এটা পরিষ্কারভাবে শনাক্ত করা আমাদের জন্য অনেক সময় সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রভোস্ট বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সবকিছু তিনি খতিয়ে দেখবেন। প্রভোস্টের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়টি ছাত্রসংদের নেতৃবৃন্দকেও জানানো হয়েছে। ছাত্রসংসদের ভিপি এবং জিএসকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে।’
এর আগে, শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের চারতলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে তানজীর হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবিতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কর্মচারীদের একটি ভবন দখল করেন। পরে নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাস না পাওয়ায় কর্মচারীদের ভবনেই রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেন তারা।