Image description

কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে দেশের মূল ধারার সাধারণ, কারিগরি ও আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার সমযোগ্যতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাধারণ, কারিগরি ও আলিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার সব স্তরের যোগ্যতা ও দক্ষতার সনদকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানে উন্নীত করতে এবং পারস্পরিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো নীতিমালা, ২০২৫’-এর একটি খসড়া প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নীতিমালাটি গত ১৬ নভেম্বর ওয়েবসাইটে জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ করেছে।

তবে প্রস্তাবিত নীতিমালার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে যোগ্যতার সজ্ঞায়ন ও সমন্বয়, পূর্ব অর্জিত অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিকভাবে মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে।

নীতিমালার সংজ্ঞায় বলা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত —১. আলিয়া সরকার স্বীকৃত ও সাধারণ বিষয়ের সমন্বিত এবং ২. কওমি মাদ্রাসা স্বতন্ত্র ও ধর্মীয় পাঠ্যক্রমভিত্তিক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) সামসুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কওমিকে মূল ধারায় নিয়ে আসতেই হবে। আগে তো মাস্টার্স (দাওরায়ে হাদিস) সমমান স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিচে থেকে উপরের দিকে যেতে হবে (কাঠামোগতভাবে)। সার্টিফিকেশন তো নিচ থেকে হতে হবে, দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সরকারের এই অল্প সময়ে হয়তো হবে না, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এলে তাদের সঙ্গে (কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) বসে তাদের বিশেষত্ব বজায় রেখে আলিয়া মাদ্রাসার মতো বাংলা ইংরেজিসহ অন্যান্য বিষয়সহ যা প্রয়োজন সেটি করতে হবে। আমাদের সে জায়গায় আসতে হবে, আর এটা হতেই হবে। কারণ একটার পর একটা প্রজন্ম আসবে, দেশে বিদেশে তাদের (শিক্ষার্থীদের) কমপিট (প্রতিযোগিতা) করতে হবে না?’

কওমি শিক্ষা স্তরের ধাপে ধাপে স্বীকৃতির কাঠামো বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়ন ম্যানুয়েল আমরা করছি। সেখানে কীভাবে কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স (গুণগত মান নিশ্চিত) হবে, কোন বিষয় কতটুকু পড়তে হবে, আমরা যেটা পড়াচ্ছি; বাইরে (দেশের বাইরে) কতটা রয়েছে সেটা ডিটেইল আমরা করবো। এটি একটি নীতিমালা করা হয়েছে, বাস্তবায়ন পর্যায় পরে হবে।’

নীতিমালায় যে কমিটি রয়েছে তারা বাস্তবায়ন পর্যায়ে সুপারিশ করবে কিনা জানতে চাইলে সামসুর রহমান খান বলেন, ‘এই নীতিমালার যে কমিটি তারাও ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করবে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলো সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করবে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডগুলো মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করবে। আর বর্তমানে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই করবে, বোর্ডের অধীনে রেখেই করা হবে। কিন্তু আমরা চাই যারাই কাজটি করবে একটি কমন ফ্রেমওয়ার্কে কোয়ালিটি যেন বজায় থাকে। দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে তো মূল স্রোতের বাইরে রাখা যাবে না। আমাদের সঙ্গে মাদ্রাসাগুলোর আলোচনা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অনেক কওমি মাদ্রাসা আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর অধীনে পরিচালিত হয়। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) হলো বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর সবচেয়ে বৃহত্তম বোর্ড, যা বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নামেও পরিচিত। বেফাক ছাড়াও বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর আরও পাঁচটি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে।

প্রস্তাবিত ‘বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো’ (বিএনকিউএফ) নীতিমালার শুরুর বর্ণনায় বলা হয়, বাংলাদেশের সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার সব স্তরের যোগ্যতা, দক্ষতা ও সনদকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও পারস্পারিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ করতে একটি জাতীয় যোগ্যতা কাঠামো প্রয়োজন। বর্তমানে দক্ষতার ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত কোনও একক কাঠামো না থাকায় দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থান উচ্চশিক্ষার সুযোগ ব্যক্তির যোগ্যতা অনেক সময় যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না। এ বাস্তবতা অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার মানোন্নয়নে কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রস্তাবিত কাঠামোতে ১০টি স্তরে জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতার শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ধারাবাহিক অগ্রগতি এবং এক ধারা থেকে অন্য ধারায় স্থানান্তর (ভার্টিক্যাল ও হরাইজন্টাল) সহজ হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মান অনুসারে গুণগতমান নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা অনুসরণ করবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালার সংজ্ঞায় বলা হয়, মাদ্রাসা শিক্ষা বলতে এমন এক শিক্ষা ধারা বোঝায়, যা ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে পরিকল্পিত এবং শরিয়াহভিত্তিক পাঠক্রম অনুসারে পরিচালিত হয়।