Image description

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বারবার ভূমিকম্পের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভূমিকম্পের কারণে উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) আগামী ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই হল খালি করতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার (২৩ নভেম্বর) সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে লাগেজ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও কারো কারো মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাময়িকভাবে হল ত্যাগের নির্দেশ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হলেও এটি আবাসন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে বাইরে থাকবার সুযোগ বা বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যে সকল শিক্ষার্থীর টিউশন বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, তারা বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী সাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীদের অনেকেই হল ছাড়তে চায় না। অনেকের কাছেই হল বাদে ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নাই। নিজেদের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হলেও অনেকের টিউশন, চাকরি, প্রি শিডিউলড কাজ কর্মের কারণে তারা এখন হল ছাড়ার নির্দেশে উভয় সংকটে আছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ঈদের দিনটাও হলেই থাকে। ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় যাদের ইচ্ছা হলে থাকবে, যাদের ইচ্ছা বাড়ি যাবে। এখানে জোড়াজুড়ির সুযোগ নাই। আর সবাই হল ছেড়ে ১৫ দিনের জন্য বাড়ি গিয়ে ফিরে এসে কি নতুন বিল্ডিং দেখবে?

তিনি আরও বলেন, হল ছাড়ার জন্য কমপক্ষে ২ দিন সময় দিতে হতো। এভাবে একদিনে মধ্যে হল ছাড়া অনেকের জন্য কষ্টকর।

কবি জসীম উদ্দীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত। বার বার ভূমিকম্প আমাদের মনে ভীতির জন্ম দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী হল ছাড়ছি। তারা যেসকল কাজ করতে চেয়ে তা ১৫ দিনে করে দেখাক এমনটাই চাচ্ছি৷

এদিকে, গত ২১ নভেম্বরে (শুক্রবার) হওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের ২১ শিক্ষার্থী আহত হন। তারপরের দিন (শনিবার) হওয়া ভূমিকম্পে শামসুন নাহার হলের ৩ শিক্ষার্থী আহত হন।

এ প্রেক্ষিতে গত শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা আজ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ সংযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া, চিকিৎসা অনুষদের ডিন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সভায় অংশ নেন।

সভায় সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও তৎপরবর্তী ঝাঁকুনি (আফটার শক)- এর কারণে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক আঘাতের বিষয়টি বিবেচনা করা হয় এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তার দিক সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সভায় বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলীর মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের মতামত হল- ভূমিকম্প পরবর্তী আবাসিক হলসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামগ্রিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার। এই ঝুঁকি নিরূপণ ও সম্ভাব্য সংস্কারের স্বার্থে আবাসিক হলগুলো খালি করা প্রয়োজন। 

একারণে সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং আবাসিক হলসমূহ খালি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামীকাল ২৩ নভেম্বর ২০২৫ রবিবার বিকাল ৫টার মধ্যে আবাসিক হলসমূহ খালি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভায় প্রাধ্যক্ষদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।