Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বুধবার (১৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট একালায় রাহমানিয়া হোটেলের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চারুকলা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আলমাস মাহমুদ রাফিদ। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাদিউল আউয়াল সুজাত, তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ভিপি পদপ্রার্থী ছিলেন। এছাড়া শাখা ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ ফাহিম, তিনি চারুকলা ইন্সটিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। হামলায় আরও জড়িত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ মো. রিদওয়ান ও ছাত্রদল নেতা আরিফসহ আরও কয়েকজন।

জানা গেছে, চারুকলা বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেইটে অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী আলমাসের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। পরে অভিযুক্তরা আলমাসকে ইট, কাঠ ও কলা গাছের কাঁধি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দাবি, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাদিউল আউয়াল সুজাত ইট দিয়ে তার মাথা থেতলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। হামলায় রক্তাক্ত অবস্থায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত সিনিয়র অফিসার ডা. শুভাশীষ চৌধুরী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেডিকেলে আনা হয়। তার মাথায় মাঝখানে গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল যা প্রায় তিন ইঞ্চি পরিমাণ। পরে আমরা তাকে জরুরি চিকিৎসা দিয়ে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলমাস বলেন, চারুকলার কিছু লেখালেখি পারমিশন ছাড়া হয়েছিল, পরে সেগুলো মুছে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি গ্রুপে কথা বললে তারা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। এর জেরেই আমাকে টার্গেট করে হামলা করেছে। আগেও তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে নিউজ করিয়েছিল।  আমাদের সেলের যে মিটিং হয়েছিল সেই সেলে আমি ওই ঘটনার প্রমাণ দিয়ে এসেছিলাম যে আমি কিছু করিনি। সেল থেকে যথাযথ ফলাফল না দেয়ার কারণে তারা আজকে এ সুযোগটা পেয়েছে।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজাত গণমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি চারুকলার অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। ঘটনার সময় আমরা অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলাম মাত্র। মারধরের অভিযোগটি মিথ্যা। তাদের নিজেদের বিভাগের মধ্যে ঝামেলায় হাতাহাতি হয়েছে।

জানতে চাইলে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদ মো. রিদওয়ান বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের কিছু অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলমাসের সঙ্গে তার বিভাগের সিনিয়রদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় এবং একপর্যায়ে মারধর শুরু হয়। আমি শেষ পর্যায়ে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হই। শেষের যাওয়ার পর যখন দেখি মারামারি। এখানে চারুকলার যারা জড়িত নিউজে তাদের নাম না এসে সংগঠনের (ছাত্রদলের) নাম আসাটা বিব্রতকর হচ্ছে। এখানে সংগঠনের ব্যানারে কেউ যায়নি, সম্পূর্ণ চারুকলার বিষয় ছিল।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত আল মাশরুল ফাহিম জানান, আলমাসের নামে পূর্বে অনেক অভিযোগ রয়েছে, ওর অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত চলছে। আলমাস ২০১৯-২০ এক সিনিয়রকে নিষেধ করেছিল যাতে তদন্তে ওর বিপক্ষে কোন কথা না বলে। গতকাল ঐ সিনিয়রকে পেয়ে স্টেশনে এইসব বিষয়ে তর্কাতর্কি করে। পরে দুই নম্বর গেটে সিনিয়র এসব বিষয়ে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করলে ও মারধর শুরু করে। পরবর্তীতে আমরা অবস্থানকারী যারা ছিলাম তারা ওর ব্যবহার দেখে ওকে গণপিটুনি দিই। ওর ব্যাপারে ডিপার্টমেন্ট এসব বিষয় আমরা অভিযোগ দিয়েছিলাম নানা অভিযোগ রয়েছে তার নামে।

এবিষয়ে চবির সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর গেইট এলাকায় চারুকলার অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী অন্য আরেকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে বলে আমরা জেনেছি। তবে কোন পক্ষই আমাদেরকে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা এই বিষয়ের ব্যবস্থা নিবো।'