Image description

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’র ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর শাহবাগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত শিক্ষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। তারা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সচিব, উপদেষ্টা হয়তো কলমবিহীন, তাই সহকারী শিক্ষকদের প্রজ্ঞাপনে তারা সই করতে পারছেন না। আমরা তাদের উদ্দেশে আজ কলম সমর্পণ করবো, যাতে তারা সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডসহ তিন দফা বাস্তবায়ন করেন।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন) সভাপতি প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রাথমিক শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এর সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘শনিবার শহীদ মিনারে ২০ হাজার শিক্ষক দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার আদায়ে অবস্থান নেবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কর্মকর্তারা আলোচনা করতে চাইলেও আমরা আর আলোচনায় যাব না। বহুবার কথা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। এবার রাজপথেই দাবি আদায় করে ফিরব।’

শিক্ষকদের তিনটি মূল দাবি হল: দশম গ্রেডে বেতন প্রদান, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০তম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এই পদক্ষেপে সহকারী শিক্ষকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

খায়রুন নাহার লিপি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েই দশম গ্রেড পাচ্ছেন। অথচ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াও সিএনএড, বিপিএড বা বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন। পিটিআইসংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন পান। তাই আমরাও ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।’

এদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা দিয়েছে।

তাদের তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে তারা পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।